ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম এর জীবনী (প্রথম পর্ব )
ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর জীবনী
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন আসসালাতু আসসালামু আলা সাইয়েদুল মুরসালিন।
।বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আলহামদুলিল্লাহ।
আজকে আমরা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে কিছু জানবো ইনশাল্লাহ।
তখনো ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর জন্ম হয়নি তার বাবা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম তার পরিবার নিয়ে ফ্যাদ্দান শহরে বসবাস করতেন। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর ছিল ৪ বিবি ও ১০ টি সন্তান। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর ১০ টি ছেলের মাতা ছিলেন লিয়া। সে সময় রাহেল ছিলেন গর্ভবতী। রাহেল আর লিয়া ছিলেন আপন বোন এবং তারা দুজনেই ছিলেন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর মামাতো বোন।হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর শশুর ও মামা ছিলেন সে সমময়ের ফ্যাদ্দান এর গভর্নর লাবন । আর এ কারণে অনেক বড় বড় বিপদ থেকে হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম তাঁর মামার নিকট থেকে সাহায্য পেতেন।
সে সময় অধিকাংশ লোক ছিল মূর্তিপূজারী। তারা ইস্তার নামক এক মূর্তির পূজা করত। কিন্তু হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম কথা বলতো, আল্লাহর বানী তাদেরকে শুনাত। মূর্তি পূজারী ধর্মযাজকগণ ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে কাফের বলল । এবং তারা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর মত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে আগুনে পুড়তে চাইল। কিন্তু হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর মামা ও গভর্নর এর কারণে ধর্মযাজক গন তা করতে পারল না। ইয়াকুবের সত্য কথাগুলোকে তারা গণ্য করল এবং ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর উপর লানতের আবেদন করলো। এদিকে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর স্ত্রী এর গর্ভপাত এর সময় আসছে। তখন ফ্যাদ্দানে দুর্ভিক্ষ চলছিল। কোন বৃষ্টি ছিল না। আকাশে গনগনে রোদ ছিল। প্রচুর খরা চলছিল। মূর্তি পূজারী গন এর জন্য হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে দায়ী করত। তারা বলতো এর জন্য ইয়াকুবের কুফরি কথা দায়ী। এবং তারা এটাও সন্দেহ করল বা অনুমান করল, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর বিবি সন্তান জন্মদানের সময় হয়তো তার বিবি অথবা তার সন্তান মারা যাবে, আর এর মাধ্যমে ফ্যাদ্দান এর দুর্ভিক্ষ দূর হবে। সবাই এ কথাগুলো বিশ্বাস করত শুধু ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর পরিবার ব্যতীত। যখন ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর সাল্লাম এর স্ত্রী রাহেল এর গর্ভপাতের সময় হল, তখন রাহেলের পেট ব্যথা শুরু হল। আশেপাশের সবাই পরামর্শ দিল ইস্তারের কাছে প্রার্থনা করার জন্য। কিন্তু হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ইস্তারের জাদুকর কে ফিরিয়ে দিল। এবং নির্জনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো। কিছুক্ষণ সময় পর রাহেলের একটি পুত্র সন্তান হল। এবং ফ্যাদ্দান এর দুর্ভিক্ষ শেষ হলো। আল্লাহতালা তার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। ঠিক সেই সময় ইস্তারের মন্দিরে আগুন লাগলো। বৃষ্টিতে সব কিছু ভিজতেছিল কিন্তু মন্দিরের আগুন দাও দাও করে জ্বলছিল । এই দৃশ্য দেখে সবাই বুঝতে পারল হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর সন্তান রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছে এবং এই বৃষ্টি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর সন্তানের বরকতেই হয় এবং চোখের সামনে ইস্তারের পতন ঘটলো । এবং সবাই হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ও তার মালিককে কৃতজ্ঞতা জানালো। সকালে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর ধর্ম গ্রহণ করল । ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম তার পুত্রের নাম রাখলেন ইউসুফ। এবং এই ইউসুফ কেউ সবাই সাধুবাদ জানালেন।
ইউসুফ আলাইহিস সালাম এভাবে সবার আদর যত্নে বড় হতে থাকলেন। কয়েক বছর পর ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর মা আবার গর্ভবতী হলেন। কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে অতিক্রম হওয়ার পর হঠাৎ করে এক অপরিচিত লোক ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর নিকট বার্তা নিয়ে আসেন। বার্তাটি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর জন্য সুখবর ছিল না। যিনি বার্তা নিয়ে আসছেন, তিনি ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে বললেন তার বাবা ইসহাক আলাইহিস সালাম আর জীবিত নেই, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর বাবা ইসহাক আলাইহিস সালাম ইন্তেকাল করেছেন। এবং তার দায়িত্ব হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর উপর অর্পণ করা হয়েছে। ফলে ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম তার পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনানের উদ্দেশ্যে রওনা হল। কিছু দূর যাওয়ার পর ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর মায়ের ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা খুব তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর নির্দেশে কাফেলা সেখানে তাঁবু গাড়লেন। এবং ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর বোনের নিকট সংবাদ পাঠালেন একজন অভিজ্ঞ ধাত্রীর জন্য। সংবাদ নিয়ে সেই কারণে যাওয়া এবং সেখান থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত অনেক দেরি হয়ে যায়। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর বোন ও ধাত্রী এসে দেখতে পান যে ইউসুফ আলাই সাল্লাম এর মা মারা গেছে এবং ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর মা একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন। এই করুণ দৃশ্যের জন্য সবাই মর্মাহত। সবাই আহাজারি শুরু করল। কান্না করলো সবাই। ইউসুফ আলাইহিস সালাম খুব বেশি ব্যতিথি হলেন। ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম এর ভাইয়ের নাম রাখা হলো বিন ইয়ামিন। ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম এর মায়ের দাফনসম্পন্ন করে কেনানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কেনানে পৌঁছানোর পর কেনানের মানুষ খুব আনন্দের সাথে তাদেরকে গ্রহণ করলেন। তাতে কি স্বার্থপর জানালেন এবং ক্যানানের মানুষ খুব উৎসব আনন্দ শুরু করলেন। মৃত্যুর সময় ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম এর মা ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর দায়িত্ব তার বোন লিয়াকে দিয়ে যান। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তার পিতা হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম ও তার দাদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কবর জিয়ারত করেন এরপর তিনি তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর বোন বেলাইতে জুব্বা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের হাতে অর্পণ করেন। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সাল্লাম জুব্বা টি হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের নিকট দেন, আর হযরত ইসহাক আলাইহিওয়া সাল্লাম ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর অনুপস্থিতিতে ইয়াকুব এর বোনের হাতে আমানত হিসেবে রেখে যান। এবং বলেন যুব্বাটি ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে দিতে এবং পরবর্তীতে জুববাটি তার উত্তরসরি বা পরবর্তী আম্বিয়ার হাতে পৌঁছে দেন। জুব্বা টি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম সম্মানের সাথে গ্রহণ করলেন। এদিকে ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম এর স্ত্রী লিয়া ১২ জন বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছিল। ফলে ইয়াকুব এর বোন ইউসুফ আলাইহিস সাল্লামকে তার হাতে অর্পণ করতে বললেন। এতে লিয়া রাজি হতে চাচ্ছিল না। এবং তিনি ১২ জনের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি তার বোনের দুই ছেলের দায়িত্ব এত বেশি পালন করছিলেন যে নিজের দশ ছেলের প্রতি যত্ন কম হচ্ছিল। এভাবেই চলতে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন