ইস্তেগফার পাঠ করার ফজিলত
ইস্তেগফার পাঠ করার ফজিলত
কেন ইস্তেগফার পাঠ করবো
ইস্তেগফার পাঠ করার গুরুত্ব
আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত দর্শক আমরা আজকে ইস্তেগফার পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কে জানব। ইস্তেগফার সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সবাই জানি, আমাদের কমবেশি সবারই এ সম্পর্কে ধারণা আছে। ইস্তেগফার মূলত আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অর্থাৎ আমরা আমাদের জীবনে যে নাফরমানি করি যে ভুল করি গুনাহ করি,যে পাপ করি সে পাপ থেকে সে গুনাহ থেকে খারাপ কাজ থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। অনেকের হয়তো এরকম ধারনা আছে যে আমরা গুনা করেছি এসতেকপার মানে আল্লাহর কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী যে গুনাহ করছি সেই গুনাহ থেকে।
ইস্তেগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ঠিক আছে কিন্তু এর মানে এই নয় জে শুধু আমাদের ক্ষমা করেন, ইস্তেগফার এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আরো অনেক নিয়ামত দান করে থাকেন।
ইস্তেগফার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ১০)।
এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহ তাআলা অনেক ক্ষমাশীল। এবং তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন যার কারণে তিনি আমাদেরকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া আল্লাহতালার একটি নির্দেশ।
ইস্তিগফার দ্বারা আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভ করা যায়। ইস্তিগফারের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন করিমে এসেছে: ‘(ইস্তিগফারের ফলে) তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি সুষম বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তোমাদের সম্পদে প্রাচুর্য ও সমমানের বরকত দেবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা পানির ফোয়ারায় শোভিত করবেন। (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ১১-১২)।
ইস্তেগফারের ফজিলত সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো
* গুনাহ মাফ হয়ে যায়
আল্লাহতালা গাফফার রহিম। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি অত্যন্ত করুণাময়। তাই আল্লাহ তাআলার কাছে খাস দিলে, অনুতপ্ত হয়ে, ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। মানুষ সাধারণত যত বড় ধরনের ভুল করে এ ভুলের শাস্তি না পেয়ে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়াটা মানুষের জন্য অনেক বড় একটা নেয়ামত।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১০)
* বিপদ দূর হয়
আমাদের মাঝে অনেক আপদ বিপদ থাকে, অনেক বালা মুসিবত থেকে। এবং কে অনেক আজব গজব থেকে। যা আমরা বুঝতে পারি না,আমাদের জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট আসে, হয়তো এমনও হতে পারে যে এগুলো হচ্ছে আমাদের কর্মের ফল। আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা এই বিপদ আপদ গুলো দূর করে দেন। এই বিপদ আপদ গুলো আমাদের কাছে আসতে দেন না। যার ফলে আমরা বুঝতেই পারিনা যে আমাদের সামনে বিপদ ছিল, আর আল্লাহ তা'আলা সে বিপদ দূর করে দিয়েছেন। তাই আমাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া উচিত।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে,‘এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে (্ইস্তিগফার করবে) অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৩)।
আল্লাহ তাআলার এই পবিত্র বাণী দ্বারা বুঝা যায় যে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেন।
* দুশ্চিন্তা দূর করে দেন
আমাদের মনের মাঝে বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা আছে, সব মানুষই কোনো না কোনো অভাব অনটন বা দুশ্চিন্তা আছে। কেউ কোন দিক দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী নয়। আমাদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা গুলো আছে ইস্তেগফার এর মাধ্যমে আল্লাহ তালা সে চিন্তাগুলো দূর করে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮১৯)
এই দুশ্চিন্তার জন্য আমরা কত ডাক্তার দেখিয়ে কত ওষুধ খাই, অথচ আল্লাহ তায়ালার কাছে এস্তেকপার পাঠ করলে আল্লাহ তালা দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং মনে শান্তি দান করেন।
* রিজিকের অভাব দূর হয়
আমাদের জীবনে যত অস্থিরতা যত কাজকর্ম যত চিন্তা ভাবনা যত কিছু আছে সব কিছু রিজিকের জন্য। আমাদের এত আছে তারপরও আমাদের ধৈর্য নেই। অথবা আমাদের এত পরিমান সম্পদ থাকতেও কোন না কোন কিছুর অভাব আছে। রিজিক বলতে শুধু খাবারকে বোঝানো হয় না। রিজিক মানে হচ্ছে একটা মানুষের যাবতীয় চাহিদা।
বেশি বেশি ইস্তেগফার করলে আল্লাহ তায়ালা এই রিজিকের অভাব দূর করে দেন এবং রিযিক প্রশস্ত করে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)।
রাসুল (সাঃ) এর এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় ইস্তেগফার এর গুরুত্ব,
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৬৭৭)
* দুনিয়ায় সফলতা অর্জন
ইস্তেগফার পাঠের মাধ্যমে যেমন আখিরাতের পাওয়া যায় তেমনি দুনিয়াতেও সফলতা অর্জন করা যায়। ইস্তেগফার পাঠ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার প্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়া যায় আল্লাহ তাআলার ভালবাসা পাওয়া যায় আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায়। ইস্তিগফার পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন এবং ওই ব্যক্তির উপর খুশি হন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন করো, তারপর তার দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা হুদ, আয়াত : ৫২)
তাই আমাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা উচিত।
* আখিরাতে সফলতা
আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আখিরাতে সফলতা অর্জন করা। আমাদের এই দুনিয়ার প্রার্থীর জীবনে আমরা যত সুখী হই না কেন কিংবা যত কষ্টই থাকুক আমাদের জীবনে এর শেষ আছে। কিন্তু আখিরাতের জীবনের শেষ নয়। আখিরাত অনন্তকালের জন্য তাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আখিরাতে সফলতা অর্জন করে। স্পিকারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা দান করেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)।
নিম্নে কয়েকটি ইস্তেগফার এর দোয়া দেওয়া হল
أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১]
মূল আরবীঃ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।
ইস্তেগফার পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন, এটা আমাদের পাপের বোঝা হালকা হয়, আমাদের মন প্রফুল্ল থাকে, মনে আনন্দ থাকে, আল্লাহতালা আমাদের মনে আনন্দ দান করেন শান্তি দান করেন, আমাদের দুশ্চিন্তা দূর করে দেন, রিজিকের অভাব দূর করে দেন, দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও সম্মান দান করেন। তাই আমাদের প্রত্তেক দিন বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা উচিত।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন