Header Ads

Header ADS

সহিহ আকিদার নামে শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফি. এর ভ্রান্ত দেহবাদি আকিদা প্রচার (পর্ব ১)


মূল তথ্য : মুফতী রেজাউল করিম আবরার সাহেবের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত।

  সহিহ আকিদার নামে শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফি. এর ভ্রান্ত দেহবাদি আকিদা প্রচার (পর্ব ১)

              সহিহ আকিদার নামে শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফি. এর ভ্রান্ত দেহবাদি আকিদা প্রচার (পর্ব ১)
                                                                রেজাউল কারীম আবরার
আল্লাহ কোথায় আছেন? এ সংক্রান্ত শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেবের একটি বক্তব্য শুনলাম। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দেহবাদি কথিত সালাফিদের মতো উত্তর দিয়েছেন! দাবির পক্ষে হাদিস বিকৃত করেছেন এবং উদ্ভট যুক্তিও পেশ করেছেন! তিনি বলেন:
“একটি ভুল বিশ্বাস হলো, অনেকে মনে করেন আল্লাহ সব জায়গায় আছেন। আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। এটা একটা ভুল কথা, ভুল বিশ্বাস। এটা আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস। ঈমানদারই হতে পারবেন না এ জিনিসগুলা বিশ্বাস না করলে! আল্লাহ কোথায় আছেন? আরশে আছেন? কুরআনে আল্লাহ বলছেন: আর রাহমানু আলাল আরশি ইসতাওয়া” রহমান কোথায় আছেন? আরশের উপরে। আলাল আরশ মানে কী? আরশের উপরে। আল্লাহ বলতেছেন উনি আরশের উপরে, আপনি বলতেছেন ওনি সব জায়গায়। এক বোবা মেয়ে মুসলমান হইছে রাসুল সা. এর যুগে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, এই মেয়েটা দাসী ছিল। রাসুল সা. জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে মেয়ে হাত দিয়ে দেখাইছে উপরের দিকে। রাসুল সা. বললেন, ঠিক আছে। সে ঈমানদার। বুঝা গেল, আল্লাহ কোথায় আছেন? সকল আসমানের উপর আরশ আছে, আরশে। আরশ কত বড়, আল্লাহ কত বড়, সেটা তিনি ভাল জানেন। আমরা এতটুকু জানি, তিনি আরশে আছেন। সব জায়গায় না। সব জায়গায় যদি আল্লাহ আছেন বলেন, তাহলে বাথরুম, সব জায়গার মধ্যে বাথরুম আছে না? তাহলে বাথরুমেও আল্লাহ আছে বলবেন? সেখানে আল্লাহর নামই নেওয়া নিষেধ, সেখানে আল্লাহ থাকেন কী করে? তাহলে আপনি কীভাবে বলেন সব জায়গায় আল্লাহ আছে? হ্যাঁ, কোন কোন আয়াতে আল্লাহ বলছেন, যেমন একটা আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “ওয়া হুয়া মাআকুম আইনা মা কুনতুম” তোমরা যেখানেই থাকো না কেন? আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন? এ আয়াত দিয়া অনেক মৌলভী সাব বুঝায় যেহেতু আল্লাহ বলেছেন যেখানেই তোমরা থাকো, সেখানেই আল্লাহ আছেন, তাহলে আল্লাহ সব জায়গায় আছেন। ভাই, এ আয়াতের অর্থ উনারা বুঝেন নাই। এ আয়াতের সামনে এবং পেছনে দেখেন এবং ব্যাখ্যা দেখেন! এ আয়াতের অর্থ হলো এই, তোমরা যেখানেই আছো আল্লাহ আছেন মানে আল্লাহ তোমাদের দেখতেছেন। আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে জানেন। যেমন কথার কথা আমরা অনেক সময় বলি: চেয়ারম্যান ইলেকশনের সময় বলি, চেয়ারম্যান সাব, চালিয়ে যান। আমি আপনার সাথে আছি। সাথে থাকার মানি উনার বডির সাথে বেধে দেওয়া কেচি দিয়া? সাথে থাকার অর্থ হলো, আমার সমর্থন আপনার প্রতি আছে, যান। সাথে থাকার মানে সব সময় কাছে কাছে থাকে না।”
শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেবের পুরো বক্তব্য চরম বিভ্রান্তিকর। প্রথমত ইসতিওয়া আলাল আরশ এর অনুবাদ করেছেন তিনি আরশে আছেন। অথচ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের স্বীকৃত আকিদা হলো, আল্লাহ সব ধরণের স্থান থেকে মুক্ত। কারণ, সকল স্থানের স্রষ্টা হলেন আল্লাহ। এমনকি আরশেরও স্রষ্টা হলেন আল্লাহ। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম আবু হানিফা রাহি. বলেন:
قلتُ: أرأيتَ لو قيل أين الله تعالى؟ فقال ـ أي أبو حنيفة ـ : يقال له كان الله تعالى ولا مكان قبل أن يخلق الخلق، وكان الله تعالى ولم يكن أين ولا خَلْق ولا شىء، وهو خالق كل شى
অর্থাৎ যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় আল্লাহ তায়ালা কোথায়? ইমাম আবু হানিফা রহ. এর উত্তরে বলেন, তাকে বলা হবে, সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে, যখন কোন স্থানই ছিলো না, তখনও আল্লাহ তায়ালা ছিলেন। আল্লাহ তায়লা তখনও ছিলেন যখন কোন সৃষ্টি ছিলো না, এমনকি কোথায় বলার মতো স্থানও ছিলো না। সৃষ্টির একটি পরমাণুও যখন ছিলো না তখনও আল্লাহ তায়ালা ছিলেন। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টা। (আল-ফিকহুল আবসাত: .৫৭)
শায়খ আহমাদুল্লাহর কাছে জানতে চাই যে, আরশ তো অবশ্যই আল্লাহর মাখলুক। আরশ সৃষ্টির আগে আল্লাহ কোথায় ছিলেন? আপনার বক্তব্য অনুযায়ী আল্লাহর আরশে আছেন! আরশ সৃষ্টির আগে নিশ্চয় আল্লাহ আরশে ছিলেন না! কারণ, তখন তো আরশই ছিল না! তাহলে কী আরশ সৃষ্টির পরে আল্লাহর অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে? নাউযুবিল্লাহ।
শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেব সম্প্রতি একটি বক্তব্যে আকিদাতুত তাহাবির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, আকিদাতুত তাহাবির আকিদা তিনি লালন করেন! কিন্তু আমরা দেখি মুখে তিনি এ কথা বললেও বক্তব্যে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন আকিদা প্রচার করেন। দেখুন, এ ব্যাপারে আকিদাতুত তাহাবিতে ইমাম তাহাবি রাহি. বলেন:
تعالى عن الحدود والغايات ، والأركان والأعضاء والأدوات ، لا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات
অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা সব ধরনের সীমা-পরিসীমা, অঙ্গ-প্রতঙ্গ, সহায়ক বস্তু ও উপায়-উপকরণ থেকে পবিত্র। অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় ছয় দিক তাকে বেষ্টন করে না। (আকিদাতুত তাহাবি: ১৫)
এজন্য আল্লাহর ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, তিনি স্থান, সময়, দিক এবং মাখলুক থেকে মুক্ত পবিত্র সত্তা। আরশ, কুরসি সৃষ্টির পূর্বে তিনি যেমন সৃষ্টি থেকে অমুখাপেক্ষী ছিলেন, এগুলো সৃষ্টির পরও তিনি এগুলো থেকে অমুখাপেক্ষী রয়েছেন। আল্লাহ আরশে আছেন বলার দ্বারা প্রথমত শায়খ আহমাদুল্লাহ আল্লাহর জন্য স্থান নির্ধারণ করেছেন। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তার অবস্থানের জন্য তার সৃষ্টি আরশের মুখাপেক্ষী সেটাও বুঝিয়েছেন! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
প্রশ্ন হলো, তাহলে ইসতাওয়া আলাল আরশ দ্বারা কী উদ্দেশ্য? এ ব্যাপারে সালাফদের এক দল ইমামের বক্তব্য ছিল, এগুলো মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভূক্ত এ ব্যাপারে আমরা চুপ থাকব।
ইমাম বুখারী রাহি. এর উস্তাদ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সুফিয়ান বিন উয়াইনা রাহি. বলেন,
كُلُّ مَا وَصَفَ اللَّهُ بِهِ نَفْسَهُ فِي كِتَابِهِ فَتَفْسِيرُهُ تِلَاوَتُهُ وَالسُّكُوتُ عَنْهُ
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাঁর সংক্রান্ত যে আয়াতগুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর তাফসির হলো তেলাওয়াত করা এবং চুপ থাকা। ফাতহুল বারী: ১৩/৪০৬।
ইমাম বায়হাকী রাহি. ওয়ালিদ বিন মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন,
سُئِل الأوزاعي ومالك وسفيان الثوري والليث بن سعد عن هذه الأحاديث التي جاءت في التشبيه، فقالوا: أمرُّوها كما جاءت بلا كيفية
অর্থাৎ আওজায়ী, মালিক, সুফিয়ান, লাইস বিন সাদকে আল্লাহর তাশবিহ সংক্রান্ত হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, এগুলোর কাইফিয়্যাত বা অবস্থা ছাড়া বর্ণনা করা ছাড়া যেভাবে এসেছে, সেভাবে চালিয়ে দিতে হবে। আস সুনানুল কুবরা: ২/৩।
এজন্য ইস্তিতাওয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে কাসির রাহি. বলেন:
للناس في هذا المقام مقالات كثيرة، ليس هذا موضع بسطها، وإنما نسلك في هذا المقام مذهب السلف الصالح: مالك، والأوزاعي والثوري، والليث بن سعد، والشافعي، وأحمد وإسحاق وغيرهم من أئمة المسلمين قديما وحديثا وهي إمرارها كما جاءت، من غير تكييف، ولا تشبيه، ولا تعطيل، والظاهر المتبادر إلى أذهان المشبهين منفي عن الله
ইসতাওয়া সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাপারে অনেক আলোচনা রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। আমরা এ সব ক্ষেত্রে সালাফে-সালেহীনের মাজহাব অনুসরণ করব। ইমাম মালিক, আওজায়ি, সুফিয়ান ছাওরি, লাইছ সাদ , শাফিয়ি, আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক সহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের ইমামদের মাজহাব। তারা কায়ফ স্যাবস্থ করা ছাড়া, সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য প্রদান ছাড়া, যেভাবে এসেছে, সেভাবে ছেড়ে দিতেন। তবে সিফাতকে অস্বীকারও করতেন না।তাদের মতানুসারে এসব শব্দের বাহ্যিকযে অর্থ সাদৃশ্যবাদীদের মাথায় আসে, সেটা কখনও আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৩/৪২৬)
ইমাম নববি রাহি. বলেন:
اعْلَمْ أَنَّ لِأَهْلِ الْعِلْمِ فِي أَحَادِيثِ الصِّفَاتِ وَآيَاتِ الصِّفَاتِ قَوْلَيْنِ أَحَدُهُمَا وَهُوَ مَذْهَبُ مُعْظَمِ السَّلَفِ أَوْ كُلِّهِمْ أَنَّهُ لَا يُتَكَلَّمُ فِي مَعْنَاهَا بَلْ يَقُولُونَ يَجِبُ عَلَيْنَا أَنْ نُؤْمِنَ بِهَا وَنَعْتَقِدَ لَهَا مَعْنًى يَلِيقُ بِجَلَالِ اللَّهِ تَعَالَى وَعَظَمَتِهِ مَعَ اعْتِقَادِنَا الْجَازِمِ أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَأَنَّهُ مُنَزَّهٌ عَنِ التَّجَسُّمِ وَالِانْتِقَالِ وَالتَّحَيُّزِ فِي جِهَةٍ وَعَنْ سَائِرِ صِفَاتِ الْمَخْلُوقِ وَهَذَا الْقَوْلُ هُوَ مَذْهَبُ جَمَاعَةٍ مِنَ الْمُتَكَلِّمِينَ وَاخْتَارَهُ جَمَاعَةٌ مِنْ مُحَقِّقِيهِمْ وَهُوَ أَسْلَمُ
অর্থাৎ সিফাতের আয়াত এবং হাদিসসমূহের ক্ষেত্রে আলিমগণের দুইটি মত রয়েছে। অধিকাংশ সালাফ কিংবা সকল সালাফের মত হলো, এগুলোর অর্থের ব্যাপারে কিছু বলা হবে না। বরং তাদের কথা হলো, আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান রাখব। আমরা এগুলোর এমন অর্থের প্রতি বিশ্বাস রাখব, যা আল্লাহর বড়ত্ব এবং মাহাত্ম্যের মিলে যায়। পাশাপাশি আমরা এ বিশ্বাস রাখব যে, আল্লাহ তাআলা এমন সত্তা, যার অনুরূপ কিছুই নেই আর তিনি দেহ, স্থানান্তর, কোনো দিকে স্থান গ্রহণ করা এবং মাখলুকের অন্য সকল সিফাত থেকে পবিত্র। মুতাকাল্লিমদের এক জামাআতের মাযহাবও এটা। মুহাক্কিক মুতাকাল্লামিদের এক জামাআত এই মতকেই গ্রহণ করেছেন। আর এটাই সবচে নিরাপদ মাযহাব। (আল মিনহাজ শারহু মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ: ৩/১৯)
ভাল করে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ স্থানান্তর থেকে মুক্ত। শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেবের বক্তব্য হলো, আল্লাহ আরশে আছেন। স্বাভাবিকভাবে আরশ আল্লাহর মাখলুক। আরশ সৃষ্টির পূর্বে তো আর তিনি আরশে ছিলেন না। পরে আরশে এসেছেন! এর দ্বারা স্থানান্তর আবশ্যক হয়ে যায়। অথচ আল্লাহ সৃষ্টি, স্থান এবং স্থানান্তর থেকে মুক্ত।
শায়খ আহমাদুল্লাহ দাবি করেছেন, আল্লাহর আরশের আছেন এটা বিশ্বাস না করলে ঈমানদারই হবে না! আমরা তার কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাইব যে, ইমাম আবু হানিফা থেকে শুরু করে, ইমাম তাহাবি হয়ে ইমাম নববি পর্যন্ত যাদের বক্তব্য নকল করেছি, তাদেরকে কী তিনি ঈমানদার মনে করেন? তারা তো আল্লাহ আরশে আছেন এ মতকে শক্তভাবে খন্ডন করেছেন।
এরপর মজার কথা হলো, এ দেশের মানুষের আকিদা বর্ণনা করতে গিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেব অস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ দেশের মানুষের আকিদা হলো, আল্লাহ সব জায়গায় রয়েছেন। সব জায়গায় থাকার দ্বারা কীভাবে থাকা উদ্দেশ্য? যদি সত্তাগতভাবে থাকা উদ্দেশ্য নেন, তাহলে তিনি আমাদের নামে মিথ্যাচার করেছেন। এটি মুলত মুতাজিলাদের আকিদা। আল্লাহ সত্তাগতভাবে সব জায়গায় আছেন, এটা আমাদের আকিদা নয়। উল্টো এ ধরণের আকিদাকে আমাদের ইমামগণ শক্তভাবে খন্ডন করেছেন।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. বলেন:
وقد نزع به بعض المعتزلة القائلين بأن الله في كل مكان وهو جهل واضح
অর্থাৎ উক্ত হাদিসের ব্যাপারে মুতাজিরা মতবিরোধ করেছে। তারা বলে, আল্লাহ তায়ালা সবর্ত্র বিরাজমান। এটি সুস্পষ্ট অজ্ঞতা। (ফাতহুল বারি: ১/৫০৮)
শায়খ আহমাদুল্লাহ যাদের অনুসরণ করেন, ড. আবদুল্লাহ জাহাংগির থেকে শুরু করে বিন বায উসাইমিন পর্যন্ত সকলেই ইলমুল কালাম এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। আবদুল্লাহ জাহাংগির রাহি. তো ইলমুল কালামের বিরোধীতা করতে গিয়ে বলেছেন যে, অনেকে ইলমুল কালাম দিয়ে ব্যাখ্যা করে আকিদার ক্ষেত্রে আল্লাহর ওহী অস্বীকার করে বসে! মজার কথা হলো, সারা জীবন ইলমুল কালাম, যুক্তি ইত্যাদির বিরোধীতা করলেও শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফি. নিজের ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করার জন্য অবশেষে চেয়ারম্যান দিয়ে যুক্তি দিলেন? আমাদের কেউ যুক্তি দিলে দেখতেন ফতোয়া কাকে বলে?
বাদির একটি হাদিস দ্বারা তিনি দলিল দিয়েছেন। এক হাদিসে তিনি অনেকগুলো বিকৃতি করেছেন। আগামী পর্বে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। সর্বশেষ এ ব্যাপারে আমাদের আকিদা তুলে ধরছি। এ ব্যাপারে শায়খুত তাফসির আল্লামা ইদরিস কান্দলবি রাহি. বলেন:
“কুরআনের উক্ত দুই আয়াতে ‘ওপর’ দ্বারা মর্যাদাগত উচ্চতা এবং শক্তি এবং ক্ষমতার উচ্চতা উদ্দেশ্য, উল্লিখিত বিষয়টিও অনুরূপ। যে সমস্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও দূরত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও রূপক নৈকট্য এবং দূরত্ব উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলার অবতরণ দ্বারাও রহমত অবতরণ বা তিনি বান্দাদের দিকে অভিমুখী হওয়া উদ্দেশ্য; নাউযুবিল্লাহ, এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা উপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা উদ্দেশ্য নয়। আমরা দুয়ার সময় আকাশের দিকে হাত এ জন্য উত্থোলন করি না যে, আকাশ আল্লাহ তাআলার জায়গা। বরং এর কারণ হলো, আকাশ হলো দুয়ার কিবলা, যেমনভাবে নামাজের কিবলা হলো বায়তুল্লাহ। কাবাকে যে বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) বলা হয়, এর এই অর্থ হলো, কাবাঘর ইবাদতের ঘর। এর অর্থ নাউযুবিল্লাহ কখনো এ নয় যে, কাবা আল্লাহর স্থান এবং তিনি কাবাঘরে অবস্থান করেন। কিবলার দিক সাব্যস্থ করা হয়েছে ইবাদতকারীদের ইবাদতের জন্য; নাউযুবিল্লাহ, তা কখনো মাবুদের দিক নয়। সুতরাং বায়তুল্লাহ যেমনভাবে নামাজের কিবলা, এমনভাবে আকাশও দোয়ার কিবলা। তিনি কাবার ভেতরে বা আকাশের অভ্যন্তরে স্থান গ্রহণ করে আছেন, এগুলো থেকে তিনি একেবারেই পবিত্র ।
সারকথা হলো, এসকল সিফাতকে ‘সিফাতে তাসবিহি’, ‘সিফাতে তানজিহি’ ও ‘সিফাতে জালাল’ বলা হয়। ইলম, কুদরত, শ্রবণ ও দর্শন ইত্যাদি সিফাতকে ‘সিফাতে তাহমিদি’ ও ‘সিফাতে জামাল’ বলা হয়।
মুজাসসিমা (দেহবাদী) ও মুশাববিহা (সাদৃশ্য নিরূপণকারী) গোষ্ঠী বলে, আরশ এক ধরনের সিংহাসন। আল্লাহ তাআলা এর ওপর সমাসীন। অর্থাৎ তিনি আরশের ওপর স্থিতি এবং স্থানগ্রহণ করে আছেন। ফিরিশতারা সে আরশকে বহন করে। ‘রহমান আরশের ওপর ইসতিওয়া করেছেন’ এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ দিয়ে তারা এর পক্ষে দলিল পেশ করে। তাদের মতে ‘আরশের ওপর ইসতিওয়া’ দ্বারা আরশের ওপর উপবিষ্ট হওয়া উদ্দেশ্য।
কিছু লোক আবার এ কথা বলে যে, আল্লাহ তাআলা সব জায়গায় আছেন। তিনি প্রতিটি স্থানে বিরাজমান রয়েছেন। তারা কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে দলিল দেয় :
مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَى ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَى مِنْ ذَلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا
তিন ব্যক্তির এমন কোনো পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন। তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশি হোক, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের সাথে আছেন।
وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
আমি তার গ্রীবার নিকটস্থ ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لَا تُبْصِرُونَ
আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখো না।
وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَهٌ
তিনিই সে সত্তা, যিনি আকাশেও উপাস্য এবং পৃথিবীতেও উপাস্য।
এ সমস্ত আয়াতের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মত হলো, এ ধরনের যত আয়াত কুরআনে উল্লেখ হয়েছে, এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ মর্যাদা ও সমুন্নত মর্যাদা এবং তাঁর ইলম ও কুদরতের ব্যাপ্তি বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলার ইলম ও কুদরত সমগ্র সৃষ্টিজগৎকে পরিব্যাপ্ত করে আছে। যেমন, এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন :
إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ يُقَلِّبُه
অর্থাৎ মানুষের অন্তরসমূহ আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝে অবস্থিত। তিনি সেগুলোকে ওলট-পালট তথা পরিবর্তন করেন।
সবার ঐক্যমতে এ হাদিসে স্বাভাবিক, বাহ্যিক এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অর্থ উদ্দেশ্য নয়। বরং এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ওলট-পালট করার ক্ষমতা বর্ণনা করা। অন্তরসমূহ আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন, তিনি যেভাবে চান তা পরিবর্তন করেন। (আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. থেকে) বর্ণিত হয়েছে :
الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ يَمِينُ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ ، فَمَنْ صَافَحَهُ وَقَبَّلَهُ فَكَأَنَّمَا صَافَحَ اللَّهَ وَقَبَّلَ يَمِينَهُ
অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার ডান হাত। যে তার সঙ্গে মুসাফাহা করল এবং তাকে চুমু দিলো, সে যেন আল্লাহর সঙ্গে মুসাফাহা করল ও তার ডান হাতে চুমু দিলো।
সর্বসম্মতিক্রমে এ হাদীসে বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়; বরং রূপক অর্থ উদ্দেশ্য। কুরআন মাজিদে এসেছে :
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ
অর্থ, নিশ্চয় যারা আপনার কাছে বায়আত হচ্ছে, তারা তো আল্লাহর কাছে বায়আত হচ্ছে।
এখানেও সর্বসম্মতিক্রমে রূপক অর্থ উদ্দেশ্য। নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল উভয়ে এক ও অভিন্ন সত্তা, এ আয়াত দ্বারা কখনোই এমনটা উদ্দেশ্য নয়। এভাবেই বিষয়টি অনুধাবন, ‘আরশের ওপর ইসতিওয়া করা’ দ্বারা বাহ্যিক ও ইন্দ্রিগ্রাহ্য অর্থ উদ্দেশ্য নয় যে, তিনি আরশের ওপর সমাসীন হয়ে আছেন। বরং এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা সুউচ্চ মর্যাদা এবং সমুন্নত মহত্ত¡ বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। যেমন, তিনি বলেন :
رَفِيعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ
তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি। (আকায়িদুল ইসলাম: ৩২, ৩৩ কালান্তর প্রকাশনী)
সহিহ আকিদার নামে আমাদের সমাজে একদল ভাই ভ্রান্ত মুজাসসিমা তথা দেহবাদি আকিদা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ তাদের ফিতনা থেকে সাধারণ মুসলমানদের হেফাজত করুন।


Thank you watching this.

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.