কোরবানি
কুরবানী
কুরবানী একটি ওয়াজিব ইবাদত। ফরজের পর যার স্থান। যার উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে সে কোরবানি না দিলে তবে সে গুনাহগার হবে। তাই যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে তার কোরবানি করা আবশ্যকীয়।
কুরবানী শুধু উম্মতে মোহাম্মদ (সা) এর উপর ওয়াজিব নয়। বরং এর পূর্ববর্তীদের ওপরও ওয়াজিব ছিল। তবে সব নবীর সময় কোরবানির নিয়ম এক ছিল না। হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম এর সময় থেকে কোরবানি ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা যে কোরবানি করি তা মূলত হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এর অনুসরণ করে। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হযরত ইসমাইল আলাইহিস সাল্লামকে কুরবানী করেছিলেন সেই অনুসরণ করে। আল্লাহতালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সরাসরি হুকুম দেননি হযরত ইসমাইল আলাইহি সালামকে কুরবানি করার জন্য। আল্লাহতায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে স্বপ্নে যুগে দেখালেন তার প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এই স্বপ্ন দেখার পর তিনি প্রথমে উট কোরবানি করলেন, কিন্তু এরপরও তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন, তারপর আবার তিনি উটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেন। এইভাবে তিনি পরপর স্বপ্ন দেখতে থাকলেন এবং উটের সংখ্যা বাড়াতে থাকলেন। তবু তিনি একই স্বপ্ন দেখতে থাকলেন। এরপর তিনি চিন্তা করলেন তার কাছে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হচ্ছে তার একমাত্র ছেলে ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই তিনি হযরত ইসমাইল আলাইহিস সাল্লাম কে কোরবানি করার জন্য নিয়ত করলেন। এটি ছিল মূলত তার জন্য একটি কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করার ঘটনাটি অনেক লম্বা। তাই সে দিকে যাব না। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর পরিবর্তে জান্নাত থেকে একটি দুম্বা কোরবানি করে দিলেন।
এখানে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা এটা চাননি যে হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি হোক। আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাকওয়ার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। এবং সেই পরীক্ষায় ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম পাস করেছেন। সফল হয়েছেন।
আমরা যখন কোরবানি করি তখন আমাদেরও উচিত আমাদের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করা। অর্থাৎ আমরা যে পশু কোরবানি করি আমাদের উচিত আমাদের সাধ্যমত উৎকৃষ্ট পশু কোরবানি করা। কারণ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, কুরবানীর পশুর রক্ত বা মাংস কোন কিছুই আমার নিকট পৌঁছায় না, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।
অর্থাৎ কে কত বড় পশু কুরবানী করল কে ছোট করলো সেটা আল্লাহ তায়ালার নিকট পৌঁছায় না। পৌঁছায় আমাদের মনের তাকওয়া, আমাদের দিলের অবস্থান। তাই কুরবানীর পশু বড় হওয়া সত্বেও তা নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। আবার আকারে ছোট হলেও সেটি নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে আমাদের প্রত্যেকটি ইবাদত যেন আল্লাহ তায়ালার জন্য হয়।
কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে আমরা যে কোরবানি করি তার মধ্যে কিছু ভুল রয়েছে যা আমরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে করে থাকি।
১. আমরা যে কোরবানির জন্য পশু ক্রয় করি সেটি নিয়ে আমরা অহংকার করি, অন্য আরেকজনের কোরবানির পশুর সাথে তুলনা করি। যা আমাদের মোটেও উচিত নয়।
২. অনেক মানুষ আছে গোস্ত বিতরণ করার সময় মনে করে নিজের শরীরের গোস্ত অন্যকে বিলিয়ে দিচ্ছে। এমনটা করা উচিত নয়। কুরবানী করার সময় এ প্রতিজ্ঞা করা বা নিয়ত করা যে প্রয়োজনে আল্লাহর জন্য নিজের জীবন বা নিজের জান কেউ কোরবানি করতে পারি। সেখানে সামান্য কয়েক টুকরো গোস্ত তো খুবই নগণ্য বিষয়।
৩. অনেক মানুষ আছে কোরবানি করে তার নিজের পালিত পশু। এটা একটি উত্তম পন্থা। কিন্তু কিছু লোক আছে এমন একটা সময় এমন একটি পশু কোরবানি করে যখন এই পশুটি আর কোন কাজে লাগে না। যেমন প্রায় ১০ বা ১৫ বছর পশুটি লালন পালনের পর যখন দুর্বল হয়ে পরে আর তেমন কোন কাজে লাগে না তখন নিয়ত করে সেই পশুটি কোরবানি করার জন্য। কুরবানীর সহ প্রত্যেকটি ইবাদত কবুল করার মালিক আল্লাহ। সেটি সহি হোক বা ভুল হোক। তবে আমাদের উচিত সবসময় সহি ভাবে ইবাদত করা। তাই আমাদের উচিত কোরবানির ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পশুটি কোরবানি করা।
৪. যারা কয়েকজন মিলে একটি কোরবানি করে, অর্থাৎ শরীয়তের মোতাবেক অনুযায়ী সাতজন মিলে একটি গরু বা মহিষ এ ধরনের একটি পশু কোরবানি করতে পারে। এমন করে কোরবানি দিলে যে ঝামেলাটি হয় তা হল, সবার আয়ের উৎস এক না। কারো হালাল টাকা কারো হারাম টাকা। কারো বৈধ টাকা কারো অবৈধ টাকা। সবার নিয়ত এক হয় না। কেউ মান সম্মানের জন্য কোরবানি করে। কেউ মনে করে আমার অনুষ্ঠান করা লাগবে কুরবানী করলে এই মাংস রেখে দিল অনুষ্ঠান করতে পারব। কেউ গোশত খাওয়ার জন্য ইত্যাদি। এরকম একেকজনের মনের অবস্থা এক এক রকম হয়। তাই যতটুকু সম্ভব একা কোরবানি করা ভালো তা একটি ছোট পশু যেমন ছাগল, ভেড়া, বকরি ইত্যাদি। আবার এইরকম শেয়ারে কোরবানি করলে, কে পা নিবে, কে মাথা নেবে, কে ভুঁড়ি নিবে এগুলো নিয়েও একেকজনের মনের মধ্যে বিভিন্ন রকম গরমিল দেখা দেয়। তাই এই বিষয়টি এড়িয়ে চলা ভালো।
প্রত্যেকটি কাজের ফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের মনের অবস্থা যদি গর মিল হয় তাহলে আমাদের ইবাদত বা আমল তা আল্লাহ তাআলার কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তা একটু ভেবে দেখেন। আপনি যদি এত টাকা নষ্ট করেন, উপভোগ করতে চান তাহলে কুরবানি ছাড়া করলে আপনার আরো উপভোগ বেশি হবে। যদি কোরবানি করতে চান বা যে কোন ইবাদত করতে চান তবে তা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই করা উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন:—
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং (পশু) কুরবানি কর।’ [সূরা কাউছার, আয়াত: ২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:—
‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’
💗Thank you watching this💗
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন