আল্লাহ তা'লার পরিচয়
আল্লাহ তা'লার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
আল্লাহর পরিচয় ও গুণাবলী মুখে বলে, কানে শুনে, চোখে দেখে মন দিয়ে কল্পনা করে শেষ করা যাবেনা। তাঁর তুলনা তিঁনিই। আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে আল্লাহর পরিচয় জানার চেষ্টা করবো।
মহান আল্লাহ্র পরিচয়
যিনি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন, যাঁর নিয়ন্ত্রণে সৃষ্ট জীবের জন্ম-মৃত্যু তিনিই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ্ এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার বা শরীক নেই, তিনিই সর্বময় ক্ষমতা ও জ্ঞানের অধিকারী। তাঁর অশেষ রহমত ও করুণার মাধ্যমেই পৃথিবীর সবকিছু নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে।
সুতরাং মহান আল্লাহ্পাক সম্পর্কে মুসলমান মাত্রই সম্যক ধারণা অর্জন করা বিশেষ প্রয়োজন । নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হল ।
মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর কিছু গুণাবলী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা হচ্ছে—“(হে নবী (সাঃ)!) আপনি বলে দিন যে, মহান আল্লাহ্ পাক একক, আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর জ্ঞান, শক্তি এবং গুণ-গরীমায় অন্য কেউই তাঁর সমান নয় । "
অনাদিকাল থেকেই মহান আল্লাহ্ স্বীয় অস্তিত্ব এবং মহিমার সাথে বিরাজ করছিলেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। সৃষ্টিকুলের উন্নতি-অবনতি, জীবন-মৃত্যু ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। এ জগতে আল্লাহ্র কর্তৃত্ব এবং মালিকানা ছাড়া অন্য কারও কোন অধিকার নেই। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে— “তিনিই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ বা উপাস্য নেই। তিনি (আল্লাহ্) চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী যাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শও করতে পারে না। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে এসব কিছুর একমাত্র মালিক তিনি (আল্লাহ্)।
আমাদের মাথার উপর যে সুবিশাল আকাশসমূহ বিস্তৃত রয়েছে অথচ এসবের মধ্যে কোন খুঁটি নেই। একমাত্র আল্লাহ্র আদেশেই এগুলো
প্রতিষ্ঠিত আছে। এ ব্যাপারে মহা পবিত্র কোরআন পাকে ঘোষণা হচ্ছে—“তিনিই আল্লাহ্ যিনি আকাশসমূহকে খুটিহীনভাবে শামীয়ানার মত ঝুলিয়ে রেখেছেন, যা তোমরা দেখছ।”
মানুষকে কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে । যথা : আগুন, পানি, বাতাস ও মাটি । এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে- “আল্লাহ্ তিনিই যিনি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মাটির উপরই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমাদেরকে বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।”
এছাড়াও পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে তথা যেদিকেই চোখ যায় সে দিকেই মহান আল্লাহ্র নিদর্শনাবলী বিরাজমান রয়েছে। এবিষয়ে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন— “বিশ্বের সর্বত্র আমার নিদর্শনাবলী প্রকাশিত হচ্ছে এবং মানুষের নিজের মধ্যেও । তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না ?”
প্রখ্যাত মুফাসির হযরত ইমাম রাযী (রহঃ) মহান আল্লাহ্ পাকের একত্ববাদের উপর প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ এক হাজারেরও অধিক প্রমাণ (যুক্তি) ) তুলে ধরেছেন। ঘটনাক্রমে তিনি এক আরব বেদুঈন মুসলমানকে কথা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্র অস্তিত্ব এবং একত্ববাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
আরব বেদুঈন লোকটি বিস্ময়ভরা কন্ঠে উত্তর দিলেন যে, মরুভূমিতে বালির ওপর পায়ের চিহ্ন দেখে যদি পথিকের পরিচয় পাওয়া যায়। দূর হতে ধোঁয়া দেখে যদি আগুনের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে বাধ্য করে। তাহলে এ বিশাল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, নদী-নালা, তরঙ্গ ইত্যাদি ফুলে-ফলে ভরা বাগান, বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি মিশ্রিত সুশোভিত পৃথিবীর এত সবকিছু দেখেও কি প্রমাণিত হয় না যে, এসবের একজন সৃষ্টিকর্তা, নিয়ন্ত্রণকর্তা অবশ্যই আছেন? আর তিনিই হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, মুক্তিদাতা মহান আল্লাহ্ তা'আলা ।
মহান আল্লাহ্ তা'আলার একত্ববাদ কিংবা অস্তিত্বের উদাহরণ কোন মানুষ তো দূরের কথা সৃষ্টিকুলের কারো পক্ষেই তা লিখে শেষ সম্ভব নয়। ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেছেন- “হে নবী আপনি বলে দিন, যদি লেখার জন্য সমুদ্রের পানিসমূহ কাল বানানো হয় তাহলে আমার কথা, আমার গুণ-গান ইত্যাদি লেখা শেষ না হতেই সাগরের পানিসমূহ শেষ হয়ে যাবে। এরূপভাবে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের পানি একসাথ করলেও তা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।"
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের ফযীলত
ফযীলত : পবিত্র হাদীস গ্রন্থে নবী আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেন- মহান আল্লাহ্ তা'আলার আসমারে হুসনা (গুণবাচক সুন্দর নামসমূহ) ৯৯টি। এগুলো যারা দোয়া প্রার্থনা করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ মান করে উল্লেখ করেন—
وكله الأسماء الحسنى فادعوه بها .
(ওয়ালিল্লাহিল আসমাউল হুসনা কান উড্ বিহা
অর্থ : আল্লাহ্ তা'আলার সবগুলো নামই সুন্দর, অতএব তোমরা এসব নামের দ্বারাই তাকে ডাক।
সুতরাং যে ব্যক্তি এসব নামসমূহ মুখস্থ করে তরীকার মত করে পড়তে থাকবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে।
তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন এই পবিত্র নামসমূহ পড়বে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হেসনে হাসীন নামক পুস্তকে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রতিদিন এই নামসমূহ পড়লে সে কখনও অন্নকটে পড়বে না।
ইসলামের পরিচয়
আল্লাহ্ তা'আলার নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। তাই আল্লাহ্ রাব্বুল 'আলামীন ইসলাম সম্পর্কে न কুরআনে জনদগঞ্জীর স্বরে
বলেন-
উচ্চারণ : ইন্নান্ দ্বীনা “ইন্দাল্লাহিল ইসলাম ।
অর্থাৎ-"মহান করুণার আধার আল্লাহ্ জাল্লা শানুহর নিকট মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।” কেননা কেবল ইসলামই দিতে পারে সঠিক পথের সন্ধান, যে পথে চললে আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আরবী ইসলাম শব্দটি “সালমুন” ধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ হল শান্তি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। অভিধানবেত্তাগণ ইসলাম শব্দের অভিধানগত অর্থ নির্ণয় করতে গিয়ে বলেন, ইসলাম শব্দের অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা ও মুসলমান হওয়া। পারিভাষিক অর্থ- সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীনের পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করা এবং মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান করা ও তদনুযায়ী জীবন গঠন করা। একথা ৰান্তৰ সত্য যে, ইসলামের প্রতিটি নিয়ম-নীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারলে জীবনের কোন পদেই ৰাধা আসবে না, বরং ইহকাল ও পরকালে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করা যাবে। কেননা, ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জন্য হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কিভাবে জীবন পরিচালনা করবে তা ইসলামে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম নবী ও মানব সত্যের দিশারী হযরত আদম (আঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন যুগে যুগে, দেশে দেশে এ মহাপবিত্র ইসলাম তথা তার মনোনীত ধন্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন জন্য তথা তার মনোনীত
এবং সর্বশেষে বিশ্ব মানবজাতির হেদায়াতের প্রতিষ্ঠার সার্বিক দায়িত্বসহ নিখিল বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ হযরত মুহা (সাঃ)-কে প্রেরণ করেছেন। প্রত্যেক নবী-রাসূল ইসলাম ধর্মের অমীয় বাণীসমূহ সারা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে গিয়ে বহু বাধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও পবিত্র ইসলামের প্রচারকার্য চালিয়ে দিয়েছেন।
আল কোরআন
মহান আল্লাহ্ তা'আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জীবনের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়সমূহ রাসুলগণের মাধ্যমে আসমানী কিতাদের দ্বারা মানুষদেরকে শিক্ষাদান করেছেন। এ নির্দেশানুসারে যারা পরিচালিত হয়েছেন তাঁরা অবশ্যই জাগতিক জীবনে উন্নতি এবং পরকালীন জীবনে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। আর যারা এর অবাধ্যতা করেছে তারা হয়েছে পথভ্রষ্ট, ভ্রান্ত ও চির জাহান্নামী। আসমানী কিতাব মতান্তরে অনেকই আছে, তন্মধ্যে চারখানা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ চারখানা এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী মহাপবিত্র “ফুরকান" যা মহাপবিত্র কোরআন হিসেবে আমাদের নিকট পরিচিত। এ মহাপবিত্র কোরআনের সত্যতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক অগণিত প্রমাণ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে নিয়ে কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
পবিত্র কোরআনের প্রথমেই ঘোষণা হয়েছে— “ এটি এমন একটি কিতাব (যা আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে) এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি খোদাভীরুগণের জন্য পথ নির্দেশক।
খোদাভীরু মুসলমানগণ এ পবিত্র কোরআনের নির্দেশানুযারী নিজেদের জীবন পরিচালনায় ব্রতী হতে লাগলেন। তাদের সঙ্গী-সাথী অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনেরা তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুরু করল যে, এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বানানো কথাসাহিত্য মাত্র এটি কোন মতেই আল্লাহর কালাম হতে পারে না। অমুসলিমদের এসব কটূক্তির জবাবে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআন হাকীমে ঘোষণা করলেন — “আর যদি আমার নির্বাচিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ মহাপবিত্র আল-কোরআনের উপর সন্দেহ করে থাক, তাহলে তোমরা এ সূরার অনুপ একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো। আর এজন্য আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আপ্ত উপাস্যদেরকে তোমানের সাহায্য করার জন্য ডাক, তোমরা সত্যবানী হয়ে থাক।"
আল্লাহর সৃষ্টজীব মানুষের পক্ষে কোনভাবেই পবিত্র কোরআনের অনুরূপ একটি আয়াত কিংবা একটি সূরা তৈরি করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা'আলা নিজেই ঘোষণা নিয়েছেন —“তোমরা কোন মতেই কোরআনের অনুরূপ একটি আয়াত কিংবা সূরা তৈরি করতে পারবে না।”
তদানীন্তম আন্ত দেশের একজন বিখ্যাত অমুসলিম কবি কোরজান শরীফের আয়াত ও সূরার অনুরূপ বাক্য-বিন্যাসের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা সাধনা করে ব্যর্থ হয়ে পবিত্র কোরআনের যথার্থতা এবং সভ্যতা স্বীকার করে বলেছিলেন---এ কোরআন মজিদ কোন মানুষের বানানো কালাম নয়। কারণ এ কোরআন যদি কোন মানুষ কর্তৃক বানানো কালাম হত, তাহলে কোরআনের অনুরূপ আয়াত কিংবা সূরা বানানো মানুষের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব হত। এটি যেহেতু এক আল্লাহর প্রেরিত বাণী সেহেতু এতে হস্তক্ষেপ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সহি ভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন। বিষয়টি শেয়ার করে আপনিও সওয়াবের অংশীদার হতে পারেন।
💗Thank you watching this💗
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন