জুমআর খুতবা আরবিতে কেন দেওয়া হয়
জুমআর খুতবা আরবিতে কেন দেওয়া হয়?
আমাদের সমাজের হাইব্রিড কিছু শায়খ জুমআর খুতবা বাংলা ভাষায় হওয়ার কথা বলেন৷ আহাফি শায়খরা আগ থেকেই ব্যাপারটি বলে আসছেন৷
একটি মজার তথ্য পাঠকের সাথে শেয়ার করি৷ আমাদের আহাফি শায়খরা কিন্তু কিয়াস মানেন না৷ কথায় কথায় সহিহ হাদিস চান! কিন্তু এ মাসআলায় এসে কিয়াসের বস্তার মুখ খুলে দেন৷ ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন জুমআর খুতবা বাংলা ভাষায় প্রদান করতে হবে! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে নববির খুতবায় অনারবি সাহাবায়ে কেরাম অংশগ্রহণ করতেন৷ তারা কিন্তু আরবি বুঝতেন না৷ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাদের বুঝার সুবিধার্তে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা অনুবাদ করে দিয়েছেন বলে একটা প্রমাণ কি আহাফি শায়খরা দেখাতে পারবেন?
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবিগণ দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন৷ কিন্তু কোন এলাকায় গিয়ে সে এলাকার মাতৃভাষায় জুমআর খুতবা দিয়েছেন, এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না৷
এর কারণ বুঝতে হলে আপনি ফিকহুল হাদিস পড়তে হবে৷ জুমআর খুতবা মূলত একটি ইবাদাত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা অনুসারে এটা শুধুমাত্র বয়ান নয়, বরং জিকির।
বুখারিতে আছে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَلَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ كَانَ عَلَى كُلِّ بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ الْمَلَائِكَةُ يَكْتُبُونَ الْأَوَّلَ فَالْأَوَّلَ فَإِذَا جَلَسَ الْإِمَامُ طَوَوْا الصُّحُفَ وَجَاءُوا يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ
আবু হুররায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমআর দিনে মসজিদের প্রত্যেকটি দরজায় ফিরিশতারা থাকেন, তারা আগত মুসল্লিদের নামে নেকি লিখতে থাকেন। যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য বসেন, তারা খাতপত্র গুঠিয়ে চলে আসেন এবং জিকির শুনেন। (বুখারি ৩২১১.মুসলিম,২০২১)
এখানে সুস্পষ্টভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাকে জিকির বলেছেন। আর জিকির রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভাষায় করেছেন, সে ভাষায় করতে হয়। উদাহরণস্বরুপ সহিহ হাদিসে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে৷।এ খন কেউ সারা দিন যিকির করল বাংলাতে আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, তাহলে সুবহানাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ বলার যে ফজিলত রয়েছে, তা সে পাবে না।কারণ জিকির করতে হবে আরবিতে। এজন্য আজানও আরবিতে দিতে হয়। যদিও আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ আজানের অর্থ বুঝে না।কারণ, আজান হল জিকির।আর জিকির কখনও মাতৃভাষায় হয় না৷ খুতবা মুসল্লি না বুঝার কারণে যদি বাংলা ভাষায় দিতে হয়,তাহলে আজানও বাংলা ভাষায় দিন। কারণ আজানের অর্থ ও মানুষ বুঝে না। এজন্য উম্মতের বরেণ্য হাদীস বিশারদ যারা, তাদের বক্তব্য হল, সর্বযুগে সব জায়গায় জুমআর খুতবা আরবি ভাষায় দেওয়া হয়েছে। আর এটাই হল “আমলে মুতাওয়ারিছ”।
নিম্নে কয়েকজনের বক্তব্য তুলে ধরছি। ইমাম নববি রাহি. বলেন
حمد الله تعالى ركن في خطبة الجمعة وغيرها ، لا يصح شئ منها إلا به ، وأقل الواجب : الحمد لله ، والأفضل أن يزيد من الثناء ، وتفصيله معروف في كتب الفقه.ويشترط كونها بالعربية.
অর্থাৎ আল্লাহর হামদ হল জুমআর খুতবার রুকন। তা ছাড়া খুতবা সহিহ হবে না।আর খুতবার জন্য শর্ত হল, তা আরবি ভাষায় হতে হবে।( আল আযকার,১/১১২.মাকতাবাতুশ শামেলা)
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি বলেন
”وكون الخطبة عربية.وأما كونها عربية فلإستمرار أهل المسلمين فى المشارق والمغارب به .مع أن في كثير من الأقاليم كان المخاطبون أعجميينّ
অর্থাৎখুতবার শর্ত হল তা আরবি ভাষায় হতে হবে। কেননা পূর্ব এবং পশ্চিমের সর্বকালের আমল হল, খুতবা আরবিতে দেওয়া। যদিও অনেক দেশের শ্রোতা অনারবি।(জাওয়াহিরুল ফিকহ,১/৩৫৫.মাকতাবাতু দারুল উলূম করাচী) ইমাম রাফেয়ি বলেন “وهل يشترط كون الخطبة كلها با العربية.والصحيح اشتراطه. অর্থাৎ বিশুদ্ধ কথা হল, জুমআর খুতবা আরবি ভাষায় হতে হবে। (ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন,৩/৩২৬.দারূল ফিকর) এ ধরণের বক্তব্য আরও আছে। এ কয়েকজন ইমামের বক্তব্য থেকে আশা করি বাস্তবতা বুঝতে পারবেন৷ আপনি উম্মাহর শ্রেষ্ঠ ফক্বীহদের ফিকহ অনুসরণ করবেন, নাকি হাইব্রীড শায়খদের ফলো করবেন, আশা করি চিন্তা ভাবনা করবেন৷
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন