হাড়িয়ে যাওয়া ভালবাসা ২য় অংশ-Lost love is the second part
হাড়িয়ে যাওয়া ভালবাসা ২য় অংশ-Lost love is the second part
সকাল বেলা দুনিয়া ত্যাগ করলেন মোহাম্মদ। পরে রয়েছে শুধু তার নিথর দেহটি। মোহাম্মদ এর ছেলে মেয়ে কান্না, নাতি নাতনি কান্না, পারার লোকেরাও কান্না করছে। সময় যাচ্ছে আর প্রস্তুত করা হচ্ছে মোহাম্মদ এর শেষ সৃতিকে সরিয়ে ফেলতে। কাটা হচ্ছে বাঁশ, কাফনের কাপড়, মসজিদ থেকে আনা হয়েছে শেষ গোসলের খাট আর আনা হয়েছে কবরস্থানে নেওয়ার খাট। আগরবাতি জালিয়ে রাখা হয়েছে মোহাম্মদ এর পাশে, সাবান, গোলাপজল আনা হয়ছে। কয়েকজন লোক বরই পাতা দিয়ে পানি গরম করছে। সময়ের সাথে সাথে মোহাম্মদ এর দূর দূরান্তের স্বজনরা এসে উপস্থিত। মোহাম্মদ এর ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দূরে নয়। এই ছোট মেয়ের কান্না যেন সবার কষ্ট কে নাড়া নিয়ে যাচ্ছে। সবার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সবার চোখ থেকে জল বের করাচ্ছে। আর এসব হচ্ছে মায়ার কারনে। রহিতের চাচাত বোন রিতারও বিয়ে হয়ছে খুব একটা দূরে নয়। সেও মোহাম্মদ এর ছোট মেয়ের মতো কান্না। মোহাম্মদ কে তৈরি করা হচ্ছে তার দেহটাকেও বিদায় দেওয়ার জন্য। সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। সবাইকে বলছে শেষ দেখা দেখার জন্য। আর শেষ দেখা দেখার জন্য যখন মুখের কাপড় টা সরানো হলো, তখন মোহাম্মদ এর মুখটা দেখে সবাই অনেক বেশি কান্না করছে, অবুঝ রহিতও বাদ নেই, হয়ত তার দাদার অসহায় মুখটা দেখে কান্না করছে। আর সবাই যে কান্না করছে, চিৎকার করে কান্না করাই এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির মানুষের মনকে নাড়াচ্ছে। আহারে মোহাম্মদ, আজ কতটা অসহায় তুমি, তুমার মুখটা দেখলে মনে তুমি বড়ই একা, তুমার কেউ নেই, তুমার কিছুই নেই, কিভাবে থাকবা তুমি, তুমার কত-শত স্বজন কান্না করছে, তুমায় ডাকছে, আজ এতটাই অসহায় তুমি যে তাদের দিকে তাকাতেই পারছনা। সেই চিরচেনা মুখটা চিরদিনের জন্য হাড়িয়ে যাবে, মুছে যাবে তুমার সকল অধিকার, সকল সৃতি। মোহাম্মদ কে নিয়ে যাচ্ছে মাটি চাপা দেওয়ার জন্য। চারজন কাধে খাটিয়া তুলে নিল। রওনা হল চিরবিদায় দিতে। এখন বাড়ির লোকের কান্না ধরে রাখার মতো না। ধরেই রাখা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে লাশের সাথে ওরাও যাবে। রহিতের চাচাত বোন বলছে, আমার দাদারে তুমরা কই নিয়া যাও, আমার দাদা, ও দাদারে তুমারে কই নিয়া যায়। রহিত কান্না করে আর মনে মনে বলে তাইলে বাড়িতে কবর দিলেইত হয়। তারপর মোহাম্মদ কে কবরস্থানে নিয়ে জানাজা পড়ে শেষ ঠিকানা, চিরদিনের ঠিকানায় রেখে মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে আসল। রহিত একটা চিহ্ন মনে রেখে দিছে। কোথায় তার দাদাকে রেখে দিছে, আজও মনে আছে তার। মোহাম্মদ মারা গেছে প্রায় ২০ বছর। যখনি রহিত কবরস্থানের পাশ দিয়ে যায় ঠিক তখনি তার দাদার কবরের পাশে তাকিয়ে তার মৃত দাদাকে অনুভব করে। এখন সে বুঝতে পারে তার দাদা তার কতটা আপন ছিল, কতটা ভাল বন্ধু ছিল, কতটা তাকে আদর করত। কি আর করার। এখন শুধু রহিত প্রার্থনা করে তার দাদার জন্য যেন ওপারে ভাল থাকে, সুখে থাকে। রহিত এখন বুঝতে পারে একটা মৃত মানুষ কতটা অসহায়। তাই সে প্রার্থনায় কান্না করে তার সৃষ্টিকর্তার নিকট মোহাম্মদ এর জন্য দোয়া করে।
হাড়িয়ে যাওয়া ভালবাসা ১ম অংশ এখানে
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন