অবেলায় মেঘ ভেসে যায় ( প্রথম পর্ব)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায় (প্রথম পর্ব)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায় ( প্রথম পর্ব)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায় ( প্রথম পর্ব)
Clouds float in the sky (Episode 1)
Clouds float in the sky (Episode 1)
গ্রামটির শুরুতেই রয়েছে আকাঁবাকাঁ রাস্তা। রাস্তাতো আকাঁবাকায় থাকে। তবে একেঁবেকেঁ অনেক দূর চেলে গেছে রাস্তাটি। এ গ্রামের এটিই বড় রাস্তা। এই সড়কটিকে সবাই বড় সরক বলে। কেন এটি বড় সড়ক তা কেউ বলতে পারবেনা। তাদের পূর্ব পুরুষদের সময় থেকে তারা এই নামেই বলে আসছে। তবে এই রাস্তাটি এ গ্রাম এবং আছেপাশের গ্রামগুলোর মধ্যে প্রধান ও সব থেকে বড়। এ গ্রাম এবং আছেপাশের গ্রামগুলোর সব মানুষ এ রাস্তাটিই ব্যবহার করে থাকে। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামটির নাম ব্রহ্মপারা। গ্রামটি কৃষি ফসল আর ক্ষেত দিয়ে ভর্তি।
এ গ্রামে কোন কিছুর অভাব নেই। এই গ্রামেই রয়েছে মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না। গ্রামের শেষ দিকে রয়েছে সুন্দর একটি নদী। যা রাস্তার থেকেও বেশি বাকাঁ। নদীটি একেঁবেকেঁ সারা গ্রামকেই ঘিরে রেখেছে। বর্ষা মাসে নদীটি কানায় কানায় ভর্তি থাকেনা, আশেপাশের জমি বাড়িগুলোকে ডুবিয়ে দেয়। নদীর পাশে যাদের বাড়ি তাদের চলাফেরা খুবই কষ্টকর হয়ে পরে। হাঁট-বাজার করার জন্য নৌকা ব্যতিত চলা সম্ভব হয়না। ঘর থেকে বের হওয়া যায়না। ছেলে-মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই সমস্যাই বেশি পরে যায় জেলেরা। কারণ জেলেদের বাড়ি নদীর কিনার ঘেষে। এই জেলে ও তাদের সন্তানরা হয় খুবই সাহসী। ছোট-ছোট বাচ্চারা যে ভংগিতে নদীতে গোসল করে যা অন্যান্য বড় মানুষ দেখেই ভয় পায়।
রমিজ, সিরাজ, আনান, শিমুল, কাশি, নিতুল সোলা, বাবরা এ গ্রামেই বাস করে। তারা এবং তাদের জীবন এ গ্রামের মাটির সাথে মিশে আছে। একজন অপরকে ছাড়া অপূর্ণ।
আজকে সকাল বেলা সোলার বাড়িতে খুব চেচামেচি হচ্ছে। কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে তা কেউ বলতে পারবেনা। আশেপাশের লোকজন সোলার বাড়িতে গিয়ে ভীর জমালো। হঠাৎ করে সোলা অজ্ঞান হয়ে গেছে। কি হয়েছিল তা কেউ বলতে পারবেনা। সোলার বউ সোলার মাথায় পানি ঢালছিল। সোলার ছেলে ভোলা ও নালু সোলার হাত পা টিপছিল।
রমিজের মা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরে। এটা ওটা জানে। মনে মনে কি বলে যেন ফুঁ দিচ্ছে। সোলার ছোট ছেলে হঠাৎ বিরক্ত হয়ে বলল, কি কও, জোরে কইয়া তাড়াতাড়ি ফুঁ দ্যাও। এদিকে সোলার বড় ছেলে ভোলা গেছে ডাক্তর আনতে। ডাক্তার আসার র্পূবেই সোলা সুস্থ্য হয়ে উঠল। সোলা এদিক ওদিক তাঁকলো। দেখল তার বাড়িতে অনেক লোক ভীর করে আছে। তাকে সবাই তাকিয়ে দেখছে। দৃশ্যটি দেখেই সোলার রাগ উঠে গেল। সে যে একটু আগেও মৃত্যুর সাথে কথা বলছিলো এটা হয়তো সোলা ভুলেই গেছে। সোলা এদিক ওদিক তাঁকিয়ে সবাইকে দেখতে পেল । কিন্তু তার বড় ছেলে ভোলাকে দেখতে না পেরে তার কলিজায় একটা ঝনঝন শব্দ শুরু করল। সাথে সাথে সে জিজ্ঞেস করল, ভোলা কহুনে গেছে? ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলল যে, ডাক্তর আনবার গেছে। সে মনে করছিল সোলা হয়তো খুশি হবে কথাটা শুনে। সোলার কলিজা কম্পন সৃষ্টির কারণ এটি। সোলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ও ডাক্তরের কাছে গেছে ক্যা, ডাক্তররে ট্যাহা দিব ক্যারা। কামাই করে কয় ট্যাহা, হুম???
রমিজের মা বলল, মইরা গেলে ব্যাক থাকপ পইরা, এত ট্যাহা ট্যাহা করক্যা, হুম?? রমিজের মা এবাড়ির মুরুব্বি। তাকে সবাই মান্য করে। কারো কোন সমস্যা হলে আগে রমিজের মা এর নিকট যায়। সে কিছু একটা মনে মনে বলে ফুঁ দেয় শরীরে। তাতে আবার অনেকে সুস্খ্যও হয়। সোলা আবার এদিক ওদিক তাঁকিয়ে মাথাটা লজ্জায় নিচু করল। মুখের মধ্যে বিরক্তিকর একটা ছাপ ভেসে বেরাচ্ছে। রমিজের মা ভোলার দিকে তাকিয়ে একটা দৃশ্যের কথা স্বরন করছে। একদা সোলার বাড়িতে এক ভিক্ষারি এসে প্রায় এক ঘন্টা দাড়িয়ে আছে। তাতে কারো কোন দৃষ্টি পরছেনা। ভিক্ষারির সামনে দিয়ে সোলা ও সোলার বাড়ির লোক বারবার আসা যাওয়া করছে, তাতে তাদের কি আসে যায়। ভিক্ষারি বারবার বলল, মাগো, বাবাগো আমারে কিছু দ্যান। আমার জামাই মইরা গেছে। কামাই করার কেউ নাইগো মা! সোলা এ কথা শুনে রেগে গিয়ে তার স্ত্রীকে বলল, ওরে এক বাটি ছাই দিয়া দ্যাও! ভিক্ষারি মহিলাটিও জবাব দিল পাল্টা। সে কোনদিন এই বাড়িতে এসে কিছু নিতে পারেনা। অন্য কেউ পায় কিনা তা সে জানেনা। রেগে গিয়ে ভিক্ষরি বলল, তাও দ্যাও, তোমার কাছ থেকে এক বাটি ছাই পাওয়া আমার সাত জন্মের কপাল। এই বলে ভিক্ষারি চলে গেল। রমিজের মা এই দৃশ্যটি ভেবে ভেবে মনে মনে বলছে, সেই সোলা তুমি । তুমি দিবা ডাক্তরের ট্যাহা।
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
এরা সবাই মিলে যে বাড়িতে বাস করে তার নাম মতুয়া বাড়ি। এ গ্রামের সবচেয়ে ভদ্র ও চঞ্চল ছেলেদের মধ্যে কেবল মাত্র দুজন সেরা। সব কিছুতেই তাদের নাম। হোক তা ভাল বা মন্দ। ভাল কাজ হলেও তার ক্রেডিট তাদের আর মন্দ হলেও তার ক্রেডিট এই দুজনের। রায়াত ও নিপেন। রায়াত নামাজ রোজা কিছু করে। কিন্তু নিপেন ভুলেও না। চুরির ক্ষেত্রে পাকা এদুজন। এদের থেকে ভাল চুরি কেউ করতে পারেনা। চিন্তা করা শেষ হতে দেরি হয় কিন্তু তাদের কাজ শেষ হতে দেরি হয়না। তবে এই চুরিতে বিপজ্জনক কিছু নেই। তারা যে চুরি করে এটা সবাই জানে। এরা কিন্তু পুকুর চুরি করেনা। গ্রামের আম,জাম,কাঠাঁল,লিচু, লেবু ইত্যাদি। কোন ফলই গাছের মালিক আগে খেয়ে দেখতে পারেনা তাদের যন্ত্রনায়। তার আগেই শেষ। যখন গ্রামের কোন ফল থাকত না, শেষ হয়ে যেত তখন তারা অন্য গ্রামে চুরি করত। গ্রামের সব ফল যখন শেষ এমন এক সময় তারা গেল অন্য একটি গ্রামে হাটঁতে। রাস্তার পাশেই গাছে গাছে আম দেখতে পেল। আম দেখেই নিপেন গাছে উঠে আম পারবে। এমন সময় রায়াত বাধাঁ দিল নিপেনকে। এরপর গেল মালিকের কাছে। আম গাছের মালিকের নিকট গিয়ে বলল, চাচি , আমরা অম্পি থেকে আইছে, আপনেগ গাছে তো মেলা আম আইছে, আমগো দুইটা আম খাইতে দিবেন? মহিলাটি কর্কশ ভাষায় তাদের গালি দিয়ে দিল। তারা দুজন মাথা নিচু করে চলে এলো। পরের দিন ভোর রাতে নিপেন রায়াতকে ডাকছে ফিসফিস করে। অই রায়াত, অই রায়াত! রায়াত তো নিপেনের প্রথম ডাক শুনেই উঠে পরল। বের হয়ে বলল, ও, তুই আইছত! আমুনা, নু তাড়াতাড়ি নু জবাবে বলল নিপেন। এরপর দুজন ঈষৎ অন্ধকারে হাঁটতে শুরু করল। পথের পারে এক বাড়ির কুকুর দেখে তারা দুজন ভয় পেয়ে গেল। কুকুর যে ঘেও ঘেও করা শুরু করল তা কোন ভাবেই তারা থামাতে পারলনা। অবশেষে তারা ফিরে এল। কিছুদুর এসেই রায়াত নিপেনকে বলল, তুই দেহি হাসাই গেতাসত গা। কুত্যা খেদানোর নিগা এম্পি আইছি। নু আবার। আবার তারা হাঁটতে হাঁটতে সেই গাছের নিকট গিয়ে পৌছল। এরপর নিপেন উঠল গাছে। রায়াত তার পেছনে ঠেঁলে ঠেঁলে ধাক্কা দিয়ে সাহায্য করল। নিপেন গাছে উঠে গেল। এমন সময় তাদের ফিস ফিস শব্দ শুনে বাড়ির লোক বের হয়ে এলো। মহিলার হাতে ছিল একটা ছোট হাত লাইট। লাইটটি এদিক সেদিক তাক করে ঘরের বাহিরে আসল। রায়াত লুকালো ঘরের পেছনে এক ঝোপের মধ্যে। নিপেনত কাপতে শুরু করছে। সে একটি বড় ঢাল ধরে একধম স্থীর হয়ে বসে আছে আর মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর মহিলা চলে গেল। নিপেন উপরের সব আম পেরে নিয়ে আসল কেবলমাত্র একটি আম বাদ দিয়ে। আর রায়াত নিচে থেকে দাড়িয়ে যে কয়েকটা আম হাত দিয়ে পাওয়া যায় তা সব পেরে নিল। নিপেন আম পেরে নিচে নেমে আসল। রায়াতের আমগুলো নিপেনের ব্যাগে রাখল। এবার তারা খুব দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পর রায়াত দাড়িয়ে উচ্চস্বরে হাসা শুরু করল। নিপেন রাগান্বিত হয়ে শুধু রায়াতের দিকে তাকিয়ে রইল।
রায়াত চেষ্টা করল সেই হাসি বন্ধ করতে কিন্তু তার হাসি বন্ধ হচ্ছিল না। এ হাসি আসছিল তার বুকের ভিতর থেকে। নিপেন জিজ্ঞেস করল, তুই আসস ক্যারে? রায়াত হাসির কারনে কথা বলতে পারছেনা। একবার কিছু কথা বলে আবার তার হাসি আসে। খুব কষ্ট করে রায়াত বলল, আসুম না! কি একটা অবস্থার মধ্যে পরছিলাম। যদি ধরা খাইতাম কি উপায় অইত ক তুই? আবার তারা হাটা শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে তারা তাদের কথা চালিয়ে যাচ্ছে। নিপেন বলল, তর ত কোন চিন্তা ন্যাই, তুই ত দৌড় দিয়া পলাইতি, আমি কি করতাম? জবাব দিল রায়াত, তুই গাছ থেকে ফাল মারতি। বলেই আবার হাসি শুরু। আমগুলো তারা সোলার পুকুরের এক ঝোপের মাঝে রেখে দিল। এরপর সকাল বেলা সেই আম বিক্রি করে দিল এক দোকন্দারের নিকট। কিছু সময় পর সেই আম বিক্রি করা টাকা নিয়ে ঐ মহিলার বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসল তারা। মহিলা বলল, কিয়ের ট্যাহা গো? প্রতি উত্তরে রায়াত বলল, আম ব্যাচা ট্যাহা। কিসের আম? বলল মহিলা। নিপেন বলল, কিসের আবার, আপনার গাছের আম। মহিলা এখনো তার গাছের আমের খবর জানেনা। নিপেনের কথা শুনে মহিলা দৌড়ে আম গাছের নিচে গিয়ে দেখল একটা আমও নেই। মহিলা তো চিৎকার শুরু করল। খুব বেশি চিৎকার। হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করল। রায়াত গিয়ে বলল, চাচি, আপনে ট্যাহা নিলে নেন না নিলে রাইখা চইলা গেলাম। এবার মহিলা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। টাকাটা হাতে নিল। কান্না করে বলল, কিসের লাইগা আমার এই ক্ষতি করলি শয়তান পুলাহান? আমার গাছের একটা আম নাই। নিপেন বলল, ঐযে দেহা যায় গাছের মাথায় একটা আম দেহাগেতাছে। পরের দিন আইহা অইডা পাইরা নিমুনি। রায়াত বলল, আপনে যদি অইদিন একটা আম আমাদের দিতেন তাইলে আইজক্যা আপনের এই দশা হয়তনা। আমাদের সাথে জিদ করলে আমরা এমন করি । আমাগো একটা আম দিলে আপনের সইত না। এহন যে একটা আম রইছে এহন ঠিকি সইতাছে। পিছ দিয়া হাজার গেলেও দেহা যায়না আর স্যাম দিয়া একটা গেলেও অইডার নিগা কলইজা ফাইটা যায় তাই না? এই বলে ঐ বাড়ি তারা ত্যাগ করল।
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
অবেলায় মেঘ ভেসে যায়-(উপন্যাস)
আজকে রায়াতদের এলাকার বড় ভাইদের ক্রিকেট খেলা। এ খেলায় রায়াতরা অংশগ্রহন করেনি। বরং রায়াতরা বড়দের বিপক্ষ দল। কারণ মাঝেমাঝে রায়াতরা বড়দের সাথে ক্রিকেট খেলে থাকে। এবং তাদের এই ক্রিকেট ম্যাচ হয় খুবই উত্তেজিত। যাকে বলে টান টান উত্তেনাপূর্ণ একটি খেলা। এই খেলা শেষে বড় দলের বড় ভাইয়েরা খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেন। এবং এখানে রায়াত-নিপেনের দল শুধুমাত্র দর্শক। এটা দেখে রায়াত ও নিপেন বড় দলের সাথে একটা খেলা রাখল। খেলাটির দিন আগামিকাল নির্ধারিত করা হলো। কারণ এই খেলা নিয়ে এতোটাই বিতর্ক চলছে যে খেলাটি এই মুহুর্তে হলে ভাল হয়। কিন্তু তারতো আর সময় নেই। তাই খেলাটির দিন আগামিকাল নির্ধারিত হলো।
খেলাটি হলো ৫০০ টাকার। প্রত্যেক দল থেকে ৫০০টাকা করে জমা দিতে হবে। যে দল জয়ী হবে তারা এই টাকা পুরোটা নিয়ে নেবে। ৫০০ টাকা বড় ভাইদের দলের পক্ষে কোন ঘটনা না। এগারো জন খেলোয়ার এর মধ্যে েএক জনেই ৫০০ টাকা দিতে পারে। আবার তাদের পক্ষে অনেকে টাকা দিতে চাইল। কিন্তু এই ৫০০ টাকা রায়াতদের এগারো জনের পক্ষে সংগ্রহ করাও কষ্ট। অনেক কষ্ট করে রায়াতরা ৫০০ টাকা জমা দিল। প্রায় সবাই মেনে নিয়েছিল যে এই খেলায় নিপেনরাই পরাজয় হবে। অনেকে বলছে এই খেলা খেলা আর তামাশা করা এক। রায়াতদের দলের সবাই জানতো তারা পরাজিত হবে। কিন্তু একজন খেলোয়ার কখনো খেলা শেষ হবার আগে পারজয় মেনে নিতে পারেনা। যাই হোক সবাই ভাবছিল খেলাটিতে বড় দল জিতবে কিন্তু ছোটদের মানে রায়াতদের সবাই সমর্থন করল। দর্শক সবাই মাঠের বাইরে থেকে ছোটদের সাবাস দিয়ে যাচ্ছিল। কিছক্ষণ খেলা হবার পর রায়াতের মনে একটা বিশ্বাস চলে এলো যে তারাই জয়ী হবে। সে সবাই খুবই সতর্ক। হয়ে খেলতে বলল। অবিশ্বাস্য এক খেলা হলো। ম্যাচটি শেষ ওভার পর্যন্ত গড়ালো। মাঠের বাইরের সবাই ছোটদের সমর্থনে হইহই শরু করল। এবং শেষ দেখা গেল খেলাটিতে জয়ী হলো ছোটদল! এ যেন তাদের এক বিশ্বকাপ জয় করা। বিশ্বকাপ জয়ী হলেও এতোটা কেউ আনন্দ পায়না। বড়দল ছিল তাদের চিরশত্রু। বড়দল কত রকম কথা দিয়ে যে ছোটদের আঘাত করত। আজ ছোটদল একটি কঠিন জবাব দিল। তাদের মুখটা আজ বন্ধ করে দিল। তবে তাদের এই শত্রুতা শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলাতে। খেলার বাইরে একজন আরেকজনের কলিজা। তাদের মধ্যে কোন আপন-পর নেই। সবাই সবার নিজের ভাই। এটাই ছিল তাদের নীতি।
আজকে ছোটদল এই টাকা ভাগাভাগি করবেনা। তারা এই টাকা বড়দের মতো খাওয়া-দাওয়া করবে। খেলা শেষে রায়াত কয়েকজনকে পাশে থাকা বাজারে পাঠিয়ে দিল বাজার করার জন্য। তারা সব রকম কেনা কাটা করে নিয়ে আসল। বাড়ি থেকে সামান্য একটু দূরে মাঠের এক কোনে এই আয়োজনের ব্যবস্থা করার জন্য জায়গা ঠিক করা হলো। সন্ধার পর শুরু হলো তাদের কাজ। রাত্রি বেলা পোঁকা-মাকড়ের ঝিমঝিম ডাক। দক্ষিণা হালকা বাতাস। এ যেন আল্লাহ পাকের এক বড় নিয়ামত। যা আত্না থেকে শান্তি আসে। কেউ কাজ করছে কেউ বসে আছে পাশেই। এটা তাদের ৫০০ টাকার আয়োজন না। এটা তাদের ৫০০০০ টাকার আয়োজন বললেও ভূল হবে। তারা জয়ী হয়ে যে তৃপ্তি অনুভব করছে আর সবাই মিলে এরকম একটা আয়োজন যা তাদের নিকট এক অকল্পনীয়। পরিবেশটা খুবই মনোরম ছিল। যেমনটা কল্পনা করা হয়। একটা মনের মতো আড্ডা দেওয়ার জন্য যা দরকার তার সবই আল্লাহ পাক আজকে তাদের দান করেছে। সবকিছুই ঠিকঠাক। তারা মাঠের এক কোনে গর্ করে চুলা তৈরী করল। এখন রান্না শুরু হবে। এমন সময় এক সমস্যা দেখা দিল। নিপেন আর রায়াত একটু দূরে বসে গল্প করছে। তবে তাদের কান আড্ডা থেকে বাইরে ছিলনা। নাজমুল নামের ছেলে বলল, ব্যাক কিছুইতো আছে কিন্তু জাবাখড়িতো নাই। রান্ধাবারি করমু ক্যামনে? লিয়া বলল, এই কথাডা রায়াত আর নিপেনের কানে দে, দেরি করস ক্যা? অরাই সব আইনা দিব। কথাটি রায়াতের কানে গেল। নিপেন এসে বলল, কিরে কি অইছে তগো? কোন সমস্যা? নিপেনকে নাজমুল সব বলল। রায়াত কান পেতে শুনছিল। নিপেন রায়াত কে ডাক দিয়ে রওয়ানা হলো। মাঠ থেকে একটু দূরে নিপেনদের বাড়ির পাশে খা সাবের বাড়ি। তারা সেখানে গেল। এই খা সাবের বাড়িতে দিনের বেলা মানুষ আসতে পারেনা ভয়ে। সেখানে অনেক বেশি অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। এখানেই রমিজের বউ এর পায়ের আংগুল কে যেন খেয়ে ফেলছিল। গোসল করতে গিয়েছিল খা সাবের পুকুরে। এই পুকুরটি খা সাবের বাড়ির সাথেই। পুকুরের একপাশে খা সাবের বাড়ি। এখানে আগে হিন্দুদের বাড়ি ছিল।
এবং এই পুকুরের পাশেই ছিল কালি মন্দির। যার কারনে মানুষ আরো বেশি ভয় পায়। কিন্তু খা সাব এতো বছর ধরে বসবাস করছে তাদের এখনো কোন ক্ষতি হয়নি। তবে সময় বুঝে সেখানে গেলে ক্ষতি হয়। এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে এখানে। পুকুর আর খা সাবের বাড়ির মাঝখানে ছিল অনেক বড় ঝোপ। কলাগাছ আর বড় বড় বাঁশ এর ঝোপ এখানে। নিপেন আর রায়াত এই ঝোপেই এসেছে মরা কলা গাছের চামড়া আর মরা বাঁশ নিতে। তাদের সাহস এর প্রশংসা করাই চলে। তবে তাদের মনেও ছিল ভয়। নিপেন একটু পরপর মাঠের দিকে তাকাচ্ছিল যে বাকিরা মাঠে আছে নাকি চলে গেছে। রায়াত বার বার নিপেনকে বলছিল তাড়াহুড়া করার জন্য। ঝোপের ভিতর থেকে একটা ছোট বাঁশ টান দিতেই একটা শব্দ হলো। খা সাব বাড়ির উঠানে বসে বিড়ি পান করছিল। তাদের তৈরী এই শব্দ শুনে খা সাব এদিকে এগিয়ে এসে বলল, ক্যাডা, ক্যাডারে এহনে? খা সাবের আওয়াজ শুনা মাত্র নিপেন পালালো কয়কটি কলাগাছের মাঝখানে। আর রায়াত রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করল। খা সাব দেখে বলল, কিরে কিয়ের শব্দ অই এহনে? জবাবে রায়াত বলল, কিয়ের শব্দ আমি কমু ক্যামনে।
অবেলায় মেঘ ভেসে যায় ( প্রথম পর্ব)
খা সাব আবার বলল, এতো রাইতে তুই কনে যাস? রায়াত বলল, অইযে মাঠে পুলাহান কিয়ের পিকনিক খাই ত্যাই দেকপার গেতাছি। কিছুক্ষন পর খা সাব চলে গেল। এরপর রায়াত ও নিপেন সব ব্যবস্থা করে নিয়ে আসল। এবার শুরু হলো রান্না। ভেজা চুলা। তাই আগুন জ্বালতে একটু সময় নিল এবং রান্না শেষ হতে একটু বেশি দেরি হয়ে গেল। রান্না শেষ হতে হতে প্রাই রাত ১২টা বেজে গেল। নিপেন ও রায়াত যখন খা সাবের বাড়ি থেকে আসছিল তখন আবার নিপেনদের লেবু গাছ থেকে কয়েকটা লেবু নিয়ে আসল। নিপেন বলল, হাইরে হাই, নিজের ব্যত্তে নিজে চুরি করি। রায়াত বলল, চুপ কইরা ছিরা নিয়া আই, যামুগা, ডর করতাছে। খাবার ব্যবস্থা করা হলো। সবাই গোল হয়ে বসল। নিপেন আর রায়াত সবার শেষে খেল। খাওয়া শেষে নিপেন তার বাড়িতে চলে গেল। এবার রায়াত একা একা কিছু রাস্তা পার করে তার বাড়ি এলো। রায়াতের ভয় করছিল। কিন্তু সে নিজেকে শান্তনা আর সাহসী মনে করে উচ্চস্বরে গান গাইতে গাইতে গেল। তবু তার শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছিল। বাড়িতে এসেই শুয়ে পরল রায়াত।
রমিজের বউ কুটনা লোক। দেখতে একটু খাটো। সারাদিন শুধু একবাড়ি থেকে আরেকবাড়ি ঘুরাঘুরি করে। তার পাশের ঘরের কালদেতর একি স্বভাব। দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়। তবে রমিজের বউ এর সাথে প্রায় সবার ঝগড়া হয়। কারণ স্বভাবটাই ঝগড়াটে। এ বাড়ির কথা আরেক বাড়ি, একজনের কথা আরেকজনকে, একটু হলে আরেকটু নিজে তৈরী করে ঘন্টার পর ঘন্টা বলা শুরু করে।
এখন চৈত্র মাস শেষ হয়ে বৈশাখ শেষ হওয়ার দিকে। জৈষ্ঠ মাস সামনে। ইরি ধানগুলো পেঁকে গেছে। এখন আর শুধু রমিজ, শিমুল সিরাজ এরা কাজ করে শেষ করতে পারেনা। এই সময়টা গ্রামের সবথেকে ব্যস্ত সময়। কথায় বলে গ্রামের মানুষ তিন মাস কাজ করে আর বারো মাস বসে খায়। সেই তিন মাস এর শেষ মাস এটি। তাই অন্যান্য দূর শহরে থেকে অনেক কাজের লোক এসেছে। নিতুল, সোলা, কাশি, বাবরা এরা সবাই এই সব লোক দিয়ে কাজ করিয়ে থাকে। বিনিময়ে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। গ্রামটা এখন পরিপূর্ন ।
সারা গ্রাম এখন ব্যস্ত। সব শ্রেণির মানুষই ব্যস্ত। যে যখন সময় পায় তখনি কাজে লেগে পরে। গাছে গাছে আম, কাঁঠাল, জাম পেঁকেছে। বাইরে যেদিকে চোখ যায় শুধু সোনালী ধান আর ধান। কয়েকদিনের মধ্যেই এই সব জমিগুলো খালি হয়ে যাবে। আগামীকাল সোলার জমির ধান কাটা হবে। সোলা রমিজ কে বিকেল বেলা বলে রাখল কাজ করার জন্য আর বলল সাথে আরো সাত-দশ জন লোক লাগবে। রমিজ সন্ধা বেল তাদের দলের সবাইকে বলে রাখল। সূর্য মামা উঠার আগেই যখন দিনের আলো ছরিয়ে পরেছে ঠিক সেই সময় থেকে কাজ শুরু করে দিল। রমিজ প্রায় বারো মাসই সোলার কাজ করে। একটা না একটা কাজ থাকেই সোলার বাড়িতে। তারা একত্রে অনেক্ষন কাজ করল। আজকে তাদের পরিশ্রমটা একটু বেশিই হচ্ছে। সোলার বাড়ি যেদিন কাজ করে সেদিন পরিশ্রম বেশি হয়। কোন বিশ্রাম নেই। তবু সোলা সারাক্ষন নানা রকম কথা বলেই থাকে। সকাল যখন নয়টা। তখন রমিজ সোলার বাড়িতে আসল খাবার নেওয়ার জন্য। সবাই কাজ করছে। রমিজকে দেখেই সোলার চোখ ভাজ হয়ে গেল। কিরে তুই কাম বাদ দিয়া এহনে কি করস? সোলা জিজ্ঞেস করল রমিজকে। রমিজ জবাব দিল, কাককু তুমি এমুন মানুষ ক্যা, আমগো কি খাওন দরকার ন্যাই, আমাগো এইডা কি প্যাট ন্যা? সোলা অবাক হয়ে মুখ ব্যাংগিয়ে বলল, ও, তুই খাওন এর নিগা আইছত, আর কতক্ষন পরতো আমিই নিয়া গেতাম। সুময়ডা নষ্ট করলি, আইছত যহন নিয়া যা। একটা বড় গামলায় ভাত আর ছোট একটা পাত্রে আলু ভর্তা এবং একটা পুরনো কলসিতে পানি নিয়ে রমিজ আবার রওয়ানা হলো ক্ষেতের দিকে। রমিজ ক্ষেতে পৌছাতেই সবাই খাওয়ার জন্য বাতরে এসে বসল। সবাই একসাথে খাওয়া শুরু করল। একটা ভাতও বেশি হলো না। গামলার সব ভাত হাত দিয়ে নিয়ে নিল রমিজ। আলু ভর্তা দিয়েই পুট ভর্তি খাবার খেল তারা। কিছুক্ষন বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ শুরু করল। হঠাৎ রোদের শক্তি একটু দুর্বল হয়ে এলো। তাপমাত্রা কমে এলো। আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি আসবে কিনা বুঝা যাচ্ছেনা। কিছু সময়ের মধ্যে চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল। পরিবেশটা খুব একটা ভাল মনে হলোনা রমিজদের।
ওরা বাড়ির দিকে যাচ্ছে। এরি মধ্যে বৃষ্টি নেমে পরল। খুব দ্রুত তারা সোলার বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। বারান্দায় দাড়িয়ে খুব তাড়াহুড়া করে নিজেদের শরীর থেকে বৃষ্টির পানি মুছে নিচ্ছে। খুব বেশি পরিমানে ঝড় শুরু হলো। অনেক ক্ষতিকর ঝড়। চারদিক থেকে এলোমেলো বাতাস আসছে। সবার একটু শীত শীত লাগা শুরু করল। বারান্দায় বৃষ্টির পানির ছিটা আসছে। রমিজরা সবাই জড়ো হয়ে কুচিমুচি করে বসে রইল। এরকম ঝড় বৃষ্টি শুরু সবার মন্টা খারাপ হলেও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মন্টা দারুন খুশিতে ভরে উঠে। তাদের মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ শুরু হয়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দল আম কুঁড়াতে গেল। তারা রাস্তায় গিয়ে দেখল আরো অনেক ছেলে মেয়েরা আসছে অন্য পাড়া থেকে। ছেলে মেয়েরা দল ভাগ করে নিল। একেক দল একেক দিকে গেল। ঝড়েরর মাত্রা আরো বেড়ে গেল। গাছের দিকে তাকালে মনে হয় গাছ গুলো ভেংগে যাবে, এতোটাই বাঁকা হয়ে যায় ঝড়ের কারণে। কিন্তু গাছ অর্ধেক ভাংগার পর আর ভাংগেনা। রায়াত আর নিপেনও বাদ রইলনা আম কুঁড়াতে। তারা আরো আগে এসেছে। তারা অন্য পারায় গিয়ে আম কুঁড়ানো শেষ করে এবার এসেছে নিজ পাড়ায়। এসে দেখে বাচ্চারা আম কুঁড়ানো অনেক আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছে। কোন কোন গাছের ডাল ভেংগে পরছে। যে গাছের ডাল ভেংগে পরে বাচ্চারা সেই গাছের নিচে দৌঁড়ে গিয়ে হট্টোগোল বাঁধিয়ে দেয়। এদের কান্ড দেখে রায়াত বলল, নাহ, এমনে কইরা অইব না, নিপেন তুই অই গাছে উঠ আর আমি এই গাছে। অবাক করা ব্যাপার। এতো ঝড়ের মধ্যে বৃষ্টির পানিতে গাছগুলো পিচ্ছিল হয়ে আছে। এর মধ্যে ওরা গাছে উঠে আম পারা শুরু করল। ছেলে মেয়ের দল গুলোও চেষ্টা করল কিন্তু তারা পারলনা। কারণ একেতো গাছগুলো পিচ্ছিল আবার তার মধ্যে বাতাসে গাছগুলো অনেক বেঁকে যাচ্ছে। যদি ভেংগে যায় গাছ। তারা গাছে উঠতে না পারলেও একটা বুদ্ধি বের করল। সবাই মিলে একত্রে আম কুঁড়াবে। পরে সমান সমান ভাগ করে নেবে। বাচ্চারা আম একত্র করা শুরু করল। রায়াত ও নিপেন অনেক গুলো আম পেরে গাছ থেকে নেমে এলো। এদিকে ঝড়ের কারণে তাদের বাবা-মা খুবই চিন্তিত। কার সন্তান কোথায় আছে কে জানে। ছেলেমেয়ের দলের মধ্যে থেকে সিমু বলল, আমারে এই বড় আম দিওন নাগব, আমি ব্যাকের থেকে বড়। সাথেসাথে জেসমিন বলল, মুর্যাদ নাই যার বড় বোয়াল তার, কইডা আম খুটছত তুই? এই নিয়ে শুরু হলো ঝগড়া। তাদের ঝগড়া দেখে রায়াত সেখানে গিয়ে বড় আমটা নিয়ে আসল। এখন আর বড় আমও নেই ঝগড়াও নেই। সুন্দর সমাধান।
আজকের দিনটা ঝরঝরে মেঘমুক্ত। আকাশে কোন মেঘ নেই। সকাল থেকেই করা রোদ। মনে হয় দিনটি ভাল কাটবে। সকালে একটু বেলা হতেই সোলা চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে। সোলা চেচিয়ে বলছে, অই রমিজ, অই সিরাজ, তরা ক্যারা কহুনে, আয় আয় রোদ উঠছেরে। সোলা অস্থীর হয়ে গেছে। আকাশের ভাল অবস্থা দেখে রমিজ তার দল নিয়ে আগেই তৈরী আছে। রমিজ তার দল নিয়ে ক্ষেতে রওয়ানা হলো। খুব দ্রুত তারা ধান কাটা শুরু করল। এক, দুই, তিন মুহুর্তের মধ্যে তারা অনেক গুলো ধান কেটে ফেলল। ধানের শীষ দেখে রমিজ বলল, এইবার দিছে আল্লাহই! আনান বলল, হুম, ক্ষেতে এইবার ধান ভালই অইছে। আজকে অনেক রোধের তাপমাত্রা অনেক বেশি। সবাই ঘেমে গেছে। তাদের গায়ের পোশাক গুলো একদম বিজে গেছে ঘামে। অনেক্ষন কাজ করার পর একটু বিশ্রামের জন্য তারা বাতরে বসল। সোলা আবার একটু পরপর উকি দেয় যে ওরা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা। সোলা এইবার এসেই দেখে রমিজরা কাজ বাদ দিয়ে বসে আছে। এটা দেখে শুরু হলো সোলার রক্তচাপ। সোলা চেচিয়ে বলল, অই তরা বইয়া রইছত ক্যা কাম বাদ দিয়া? সিরাজ সোলার কথা শুনে রমিজকে বলল, রমিজ ভাই তুমার যে কাম, এ্যাবা ম্যানসের ব্যাত্তে কেও কাম করে। রমিজ একটু রেগে গিয়ে বলল, তর ট্যাহার দরকার না অইলে তুই জাগা। আনান বলল, রাগ করস ক্যা রমিজ, কাম ছারা আমগো পেটে ভাত জ্যাইবনি, সোলা মানুষটা সুবিদার না। দুপুরে সবাই খাবার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছে। এরমধ্যে সোলা এসে হাজির। সোলা বলল, কিরে তরা কি করস? দুপুরে খাওয়ার যাবার আগে মাথায় কইরা ধান নিয়া যাইস। সবাই মাথায় করে ধান নিয়ে যাচ্ছে। কেউ খালি গায়ে আবার কারো গায়ে কাপড় আছে। তাদের শরীর দেখে বুঝার ক্ষমতা নেই যে তারা গোসল করছে নাকি ঘামে ভিজে আছে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঘাম। সবাই এলো। খাবার খেল। এবার একে একে সব ধান বাড়িতে নিয়ে আসল। তারপর ধান মাড়াই করা হলো। এভাবে কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় সবার কাজ শেষ। এখন কাজ হলো খড় শুকানো আর ধা সিদ্ধ করে সেই ধান শুকানো। এই ধান গুলো কেউ সিদ্ধ করে শুকাচ্ছে কেউ বা খড় শুকানেরা কাজে ব্যস্ত। এখন আর পারায় এতো কাজ নেই তাই পারার কাজের লোক দিয়েই কাজ হয়ে যায়। কাজের চাপ নেই বলেই বাইরে থেকে আসা কাজের লোক চলে গেছে তাদের নিজেদের এলাকায়।
রমিজের মাথায় বিশাল চিন্তা। চিন্তার পাহাড় তার মাথায়। রমিজের চার মেয়ে, শিমুলের চার মেয়ে এক ছেলে। এরা দুজন আলাপ করছে। নানান রকমের আলাপ। কথায় কথায় রমিজ গলাটা নরম হয়ে এলো। অসহায় একটা চেহেরা নিয়ে শিমুলের দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল, শিমুল, আমার বড় মাইয়াত ডাংগর অইছে। এহন কি করমুরে ভাই, মাইয়ারতো একটা বিয়্যা দেওন লাগে। শিমুল তার সংগে মিলিয়ে এক সাগর হতাশা নিয়ে বলল, হুম, হরে ভ্যাই, আমার তো একি জামেলা, এত্যোগুল্যা পুলাপানের খাওন বারন দিতে পারিনারে ভ্যাই, তোমার মাইয়া তো ডাংগর অইছে আমার মাইয়ার তো এহনো বিয়্যার বয়স অইনাই। এই কথা শুইনাতো রমিজ কেঁদেই দিল। শিমুল আবার বলল, কাইন্দ না , কাইন্দা কি অইব? আল্লাহের ডাহ, তাঁর তো মেলা ক্ষমতা।
জৈষ্ঠ শেষে আষাঢ়ে মাস এখন। বৈচিত্রময় বাংলার ছয়র ঋতুর একটি ঐতিহ্যবাহী ঋতু হলো বর্ষাকাল। ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল অন্যতম। এই ঋতু বাংলার মানুষকে যেমন অনেক কিছু দিয়ে যায় তেমনি কাউকে সর্বহারা করে দেয়। বাংলা বারো মাসের মধ্যে আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দু মাস নিয়ে বর্ষাকাল। আকাশটা সবসময় মেঘে ঢাকা থাকে। আবহাও অনেকটা শীতকালের সাথে মিল থাকে। কোন কোন দিন সূর্যের দেখা মেলেনা আকাশে। আবার কখনো দু-তিন দিন পর সূর্যের দেখা মেলে তাও আধ মরা হয়ে। তামপাত্রা খুবই কম। কোন কাজের রোদ না। আজকে হঠাৎ ভিন্ন চিত্র। সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি। বৃষ্টিযে বৃষ্টিই। শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি। ঘরের দরজা-জানালা খুললে শুধু কুয়াশার মতো সাদা চিত্র। শুধু পানি আর পানি। এতো বৃষ্টি কিভাবে হয় আল্লাহ ভালো জানে। এখন তো আর ছেলে-মেয়েদের কোন কাজ নেই। বড়দেরই বা কি কাজ। কাজ থাকলেই কি করার উপায় আছে নাকি? ঘরের ভেতর থেকে বাইরের কিছু ভাল করে দেখায় যায় না আবার কাজ করবে। এ বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘর হচ্ছে সোলা আর কাশির। বড় করে বারান্দা করে ঘর দিয়েছে তারা। সোলার বাড়িতে তো কাউকে ঢুকতেই দেয়না। তাই সব ছেলে-মেয়ের দল এসেছে কাশির ঘরে। বারান্দায় চুপ করে বসে আছে। এতো বৃষ্টির মধ্যে কিই বা করবে তারা। সবার একটু শীত শীত করছে। এরি মধ্যে রায়াত বলল, অই, আয় আমরা লেবু নিয়্যা আহি, লবণ দিয়া খামু। রমিজের মেয়ে সৌরভী বলল, না, চুরি করমু না, তুই খাগা। রায়াতের মুখটা ছোট হয়ে গেল সৌরভীর কথা শুনে। কাশির ছোট মেয়ে সালু বলল, নু আমরা পাশা খেলি। রায়াত এইবার সালুর সাথে একমত হয়ে জোর গলায় বলল, হহ, নু পাশা খেলাই। বৃষ্টির মধ্যে মাথায় একটা পাতলা গামছা দিয়ে চার-পাঁচ জনে গেল বাড়ির নিচে রাস্তায়। সেখানে রায়াতদের একটি খেজুর গাছ আছে। এ বাড়িতে মোট দুটি খেজুর গাছ আছে। একটি রায়াতদের আরেকটি সোলার। রায়াতদের খেজুর গাছে গিয়ে দেখল অনেকগুলো পঁচা খেজুর পরে আছে। তারা কয়েকটি খেজুর নিয়ে আবার কাশির ঘরের বারান্দায় আসল। সালু সেই খেজুর কাচি দিয়ে কেটে পাশা তৈরী করল। রায়াত ও নিপেন এক পক্ষ আর সালু-সৌরভী এক পক্ষ। রায়াতের সামনে নিপেন আর পাশে সালু ্এবং সালুর সামনে সৌরভী আর পাশে নিপেন বসল। শুরু করল খেলা। কয়েকবার সবাই পাশা ছুরে মারল কিন্তু খেলার নিয়মে কারো চার হলো না। চার না হলে খেলা সামনের দিকে অগ্রসর করা যায়না। চার পরার নিয়ম হলো চারটি পাশার মধ্যে চারটিই উল্টো হয়ে পরতে হবে। সালু বিরক্ত হয়ে বলল, দুরু, চ্যার পরেনা ক্যারে? রায়াত বলল, তগো চ্যার পরব না, আমাগো আগে চ্যার পরব। এই বলে পাশা মাটিতে ফেলতেই চার হলো রায়াতের । এভাবে তারা খেলতেই আছে। বৃষ্টি আর থামেনা তাদের খেলাও শেষ হয়না।
খেলা শেষ হয় আবার শুরু হয়। একদল হারে আবার শুরু হয় আরেক দল হারে। এভাবে খেলা চলছেই। এরই মধ্যে কয়েকবার মেঘের গর্জন হলো। বিদ্যুৎ চমকালো কয়েকবার। এতো বিকট শব্দ যে বিদ্যৎ চমকানোর আলো দেখেই সবাই কানে হাত দিয়ে কান ঢেকে রাখছে যেন শব্দ কম শুনা যায়। কিন্তু এরা বলতেই পারবেনা কখন বজ্রপাত হলো আর কে কি বলল। এদর কোন ভয় নেই বলেলই চলে। আসলে এরা খেলার মধ্যে এতোটাই মনোযোগী যে অন্যদিকে তাদের তাল নেই। কিন্তু খেলার মধ্যে হঠাৎ ঝগড়া। তাদের স্কোর নিয়ে। রায়াত তাদের স্কোর বিশ বলাতেই সালু বলল, রায়াত মিছা কথা কইছত, অই তগো আট অইছে। রায়াত এক ধমক দিয়ে বলল, হুর, আমাগো এক কুড়ি। সৌরভী বলল, বাবারে বাবা চুররে, আট থ্যাইক্যা এক ফাল মাইর্যা কুড়িতে গেছেগ্যা! রায়াত দাড়িয়ে গেল। সালু একি কথা বলল আবার। কথা শুনেই রায়াত সালুর চুলে ধরে টানাটানি করা শুরু করল। দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হলো। এরমধ্যে রায়াত হুহু করে কেঁদে দিল। রায়াতের কান্না শুনে কাশির বড় মেয়ে বেলী ঘরের ভেতর থেকে বের হয়ে আসল। তাদের সবার একবার তাকিয়ে বলল, কিরে কি অইছে তগো? সৌরভী বলল, ব্যাক দোষ রায়াতের। নিপেন শুধু দাড়িয়ে দেখছে। ঠিক এমন সময় বিকট একটা বজ্রপাতের শব্দ। শব্দ শুনে নিপেন বলল, ওরে বাবা, এত্তো বড় ঠাহটা পরল, আমার তো মুনই আমাগো ব্যাত্তে পরছে। রায়াত এখনো ঘুমরা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি শেষ হয়না। এদিকে বেলা শেষ হওয়ার পথে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। নিপেন ও সৌরভী এখনো বাড়িতে যায়নি। কিভাবে যাবে তা এখন তাদের ভাবনায় এসেছে। নিপেন হাত দিয়ে মাথাটা ঢেকে এক দৌড় দিল। এক দৌড়ে রায়াতদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। রায়াত তা দেখে বলল, অই বিজা জাবিগাতো। নিপেনের কানে কথা যাওয়ার আগেই সে তাদের চোখের আড়াল হয়েগেছে। একটু পরই আসল সৌরভীর মা। এসেই মাথায় দুটি থাপর মেরে বলল, খ্যায়্যা কোন কাম ন্যাই তর, হারাদিন কোন খবর ন্যাই, ব্যাত্তে নু আইজক্যা পরামু তরে। মার খেয়েই সৌরভী চলে গেল। রমিজের বউ কিছুক্ষন বকবক করল কাশির বারান্দায় দাড়িয়ে। তার কথায় কেউ কান না দেওয়ায় সে চলে গেল। পরের দিন সৌরভীর বিষয় নিয়ে সবার মাথা ব্যাথা শুরু হলো। সবাই বলছে রমিজের কাজটা করা ঠিক হয়নি। কাশির ঘরে বসে বৈঠক বসেছে। কাশি বলল, ডাংগর একটা মাইয়ারে এমনে কেউ মারে। নিতুল রাগান্বিত হয়ে বলল, অগো মাইয়ারে যা মন চায় করব তা তোমাগো কি। সালুর মা বলল, ত্যাই বুইল্যা এত্তো বড় মাইয়ারে মারব। রায়াতের মা বলল, না, না, এইডা ঠিক কাম করে ন্যাই। রায়াতের বাবা নিতুল আরো বেশি রেগে গিয়ে বলল, অর মাইয়া ও মারছে তাতে তর কি, তর পুলারে তুই মারগা যা। নিতুল ও কাশি দুই ভাই। সেই হিসেবে বেলী ও সালু রায়াতের চাচাতো বোন। সালুর দুই বোন ও এক ভাই। রায়াত ও সালুদের ঘর পাশাপাশি। রায়াতদের ঘরের পূর্বের ঘর কালদেতর। তার পূর্বে রমিজের ঘর। রমিজের ঘরের দক্ষিনের ঘরটা হচ্ছে সোলার। এই নিয়ে হলো মৌলভী বাড়ি। এ বাড়ির পূর্ব পুুরুষরা অনেক ধার্মীক ছিল। তাদের কারনেই এ বাড়ির নাম মৌলভী বাড়ি। এখন এ বাড়িতে শুধু ঝগড়াই হয় বেশি। নিপেনের বাড়ি মাঠের পাশে। শিমুল, আনান, সিরাজ এদের বাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এ পারার মানুষ তারা।
খেলা শেষ হয় আবার শুরু হয়। একদল হারে আবার শুরু হয় আরেক দল হারে। এভাবে খেলা চলছেই। এরই মধ্যে কয়েকবার মেঘের গর্জন হলো। বিদ্যুৎ চমকালো কয়েকবার। এতো বিকট শব্দ যে বিদ্যৎ চমকানোর আলো দেখেই সবাই কানে হাত দিয়ে কান ঢেকে রাখছে যেন শব্দ কম শুনা যায়। কিন্তু এরা বলতেই পারবেনা কখন বজ্রপাত হলো আর কে কি বলল। এদর কোন ভয় নেই বলেলই চলে। আসলে এরা খেলার মধ্যে এতোটাই মনোযোগী যে অন্যদিকে তাদের তাল নেই। কিন্তু খেলার মধ্যে হঠাৎ ঝগড়া। তাদের স্কোর নিয়ে। রায়াত তাদের স্কোর বিশ বলাতেই সালু বলল, রায়াত মিছা কথা কইছত, অই তগো আট অইছে। রায়াত এক ধমক দিয়ে বলল, হুর, আমাগো এক কুড়ি। সৌরভী বলল, বাবারে বাবা চুররে, আট থ্যাইক্যা এক ফাল মাইর্যা কুড়িতে গেছেগ্যা! রায়াত দাড়িয়ে গেল। সালু একি কথা বলল আবার। কথা শুনেই রায়াত সালুর চুলে ধরে টানাটানি করা শুরু করল। দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হলো। এরমধ্যে রায়াত হুহু করে কেঁদে দিল। রায়াতের কান্না শুনে কাশির বড় মেয়ে বেলী ঘরের ভেতর থেকে বের হয়ে আসল। তাদের সবার একবার তাকিয়ে বলল, কিরে কি অইছে তগো? সৌরভী বলল, ব্যাক দোষ রায়াতের। নিপেন শুধু দাড়িয়ে দেখছে। ঠিক এমন সময় বিকট একটা বজ্রপাতের শব্দ। শব্দ শুনে নিপেন বলল, ওরে বাবা, এত্তো বড় ঠাহটা পরল, আমার তো মুনই আমাগো ব্যাত্তে পরছে। রায়াত এখনো ঘুমরা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি শেষ হয়না। এদিকে বেলা শেষ হওয়ার পথে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। নিপেন ও সৌরভী এখনো বাড়িতে যায়নি। কিভাবে যাবে তা এখন তাদের ভাবনায় এসেছে। নিপেন হাত দিয়ে মাথাটা ঢেকে এক দৌড় দিল। এক দৌড়ে রায়াতদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। রায়াত তা দেখে বলল, অই বিজা জাবিগাতো। নিপেনের কানে কথা যাওয়ার আগেই সে তাদের চোখের আড়াল হয়েগেছে। একটু পরই আসল সৌরভীর মা। এসেই মাথায় দুটি থাপর মেরে বলল, খ্যায়্যা কোন কাম ন্যাই তর, হারাদিন কোন খবর ন্যাই, ব্যাত্তে নু আইজক্যা পরামু তরে। মার খেয়েই সৌরভী চলে গেল। রমিজের বউ কিছুক্ষন বকবক করল কাশির বারান্দায় দাড়িয়ে। তার কথায় কেউ কান না দেওয়ায় সে চলে গেল। পরের দিন সৌরভীর বিষয় নিয়ে সবার মাথা ব্যাথা শুরু হলো। সবাই বলছে রমিজের কাজটা করা ঠিক হয়নি। কাশির ঘরে বসে বৈঠক বসেছে। কাশি বলল, ডাংগর একটা মাইয়ারে এমনে কেউ মারে। নিতুল রাগান্বিত হয়ে বলল, অগো মাইয়ারে যা মন চায় করব তা তোমাগো কি। সালুর মা বলল, ত্যাই বুইল্যা এত্তো বড় মাইয়ারে মারব। রায়াতের মা বলল, না, না, এইডা ঠিক কাম করে ন্যাই। রায়াতের বাবা নিতুল আরো বেশি রেগে গিয়ে বলল, অর মাইয়া ও মারছে তাতে তর কি, তর পুলারে তুই মারগা যা। নিতুল ও কাশি দুই ভাই। সেই হিসেবে বেলী ও সালু রায়াতের চাচাতো বোন। সালুর দুই বোন ও এক ভাই। রায়াত ও সালুদের ঘর পাশাপাশি। রায়াতদের ঘরের পূর্বের ঘর কালদেতর। তার পূর্বে রমিজের ঘর। রমিজের ঘরের দক্ষিনের ঘরটা হচ্ছে সোলার। এই নিয়ে হলো মৌলভী বাড়ি। এ বাড়ির পূর্ব পুুরুষরা অনেক ধার্মীক ছিল। তাদের কারনেই এ বাড়ির নাম মৌলভী বাড়ি। এখন এ বাড়িতে শুধু ঝগড়াই হয় বেশি। নিপেনের বাড়ি মাঠের পাশে। শিমুল, আনান, সিরাজ এদের বাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এ পারার মানুষ তারা।
পরেরদিন সকাল বেলা গনগনে রোগ। সবাই ধান, খড় যার যা আছে রোদ পেয়ে শুকানোর জন্য ছড়িয়ে রেখেছে। হঠাৎ সোলার বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। কান্নার শব্দ শুনে ওরা চলে গেল সোলার বাড়িতে। ওরা দাড়িয়ে কান্না শুনছে। গিয়ে তারাতো অবাক। দেখে সোলার বউ কান্না করছে। সোলার বউ কান্না করে সোলাকে বলছে, অই হালায় এত্তো খারাপ। ব্যাকেই কাম করে কামলা নিয়্যা আর অই হালায় আমারে দিয়্যা কাম করািইয়া রোোদর মধ্যে পুইরা হালাইল। আরো কতকি বলে সোলাকে গালাগালি করছে। রায়াত আর নিপেনের বুঝতে বাকি রইলনা যে সোলাকে গালাগালি করছে। সবাই কাজ করছে। আকাশে আবার মেঘ। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা নেই। কিন্তু সবার ধারনাকে অপেক্ষা করে বৃষ্টি এসেই পরল। সবার মধ্যে একটা ব্যস্ততা শুরু হলো। রায়াত দৌড়ে দৌড়ে দেখছে কার কাজ বাকি আছে। বৃষ্টিতে কার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতি বেশি হচ্ছে সোলা ও কাশির ।
সোলার ধান গুলো সব ভিজে যাচ্ছে। তাই রায়াত ও নিপেন সোলার ধান ঘরে নিল এরপর আসল কাশির বাড়িতে। কাশি খড় গুলো সব ভিজে যাচ্ছে। এবার তারা কাশির খর সব একত্রি করে এক জায়গায় রেখে দিল। এরপর বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করল। পারার সব পুলাপান একত্রিত হলো। তারা খুব বেশি হইচই শুরু করল। কাশির খড় একত্রিত করতে গিয়ে বেলীও ভিজে গেছে। রায়াতদের সাথে বেলীও যুক্ত হলো। কিছুক্ষন তারা লাফালাফির পর গেল পুকুরে গোসল করতে। পুকুরটি এংগার পুকুর নামেই পরিচিত। নিপেনের বাড়ির সাথে এই পুকুর। খা সাবের বাড়ির সাথে যে পুকুর এটিই সেই পুকুর। খা সাব আর নিপেনের বাড়ি একত্রে। খা সাব নিপেনের দাদার ভাই। সেই দিক দিয়ে নিপেনেরও দাদা হয়। সবাই যাচ্ছে পুকুরে। সাথে বেলী। পুকুরে নামতেই তারা দেখতে পেল পুকুরের একপাশে বৃষ্টি আরেক পাশে বৃষ্টি নেই। এটা দেখে রায়াত বেলীকে বলল, আপা, এই পাগারে তো ভূত আছে। আমাগো তো ভূতে দেখতাছে। আমাগো এহনে বৃষ্টি অইনা ক্যা? বেলী বলল, হুনস ন্যাই আগে, মুরুব্বিরা কইত, আগা নাইয়ে বৃষ্টি অই কিন্তু পাছা নাইয়ে বৃষ্টি অইনা! সবাই গোসল করে চলে গেল। পরের দিন সকাল বেলা সবাই ভাল একটা খবর শুনলো। রমিজের আরেকটি মেয়ে হয়ছে।
অবেলায় মেঘ ভেসে যায় - এ বিষয়ে জানতে
1 টি মন্তব্য
Apnar lekha uponnas ti Khub sundor
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন